
কেমন শহর, এমন শহর
আমার থেকে কয়েক শত ক্রোশ দূরে বসে থাকা এক বন্ধু আমায় চকচকে দুই চোখ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, “আচ্ছা ঢাকা কেমন শহর বলতো?”
আমি সাদামাটা গলায়, শহরের দূষিত সাদা আকাশের মতো চেহারা করে বলেছিলাম,
“ঢাকা বিষন্নতার শহর। দুরহ চিন্তার বীজ বুকে বয়ে বেড়ানো মানুষগুলোর বিষন্নতার।”
“রান্নাঘরে এক টুকরো পনির ইঁদুর ছানাকে কুড়েকুড়ে খেতে দেখেছিস? আমি দেখেছি এই শহরে আপদ্গ্রস্ততা কেড়েকুড়ে খাচ্ছে আমার বাড়ন্ত মস্তিষ্কের এনজাইম।
রাজপথের দিকহীন রাস্তায় সজোরে কষে দেয়া ব্রেকগুলোকে খাবলা মেরে তুলে নিতে দেখেছি আমার সহযাত্রীর ক্লান্ত চোখ।
রাস্তায় পার হতে গিয়ে দেখেছি লাল রক্তে ভিজে পরে থাকা আমার সদ্য চাকরীতে ঢোকা বন্ধুর কালো চামড়ার মানিব্যাগ।
ওদের জাদুর শহর আমার কাছে এক সন্ধ্যে জ্যামের আকুলতার।
ঢাকার ক্যাম্পাসে হাতেহাত গুঁজে রিক্সায় চড়তে গেলেই আমার অশান্তি লাগে খুব। কতই না সম্পর্ক এমনই করে স্বপ্ন বুনেছিলো এই কৃষ্ণচূড়ার পাঁপড়ি পেতে থাকা রাস্তায় হাঁটতে-হাঁটতে,
কতনা বিত্তেরা চোখের পলকে সর্বস্ব হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছে ততধিকবার পুড়ে যাওয়া কমলাপুরের করুণ বস্তিতে, এই শহরেই
কতনা মেধাবী ব্যাংকে ঢুকেছে, টিউশন করিয়ে, কলেজ ছাড়িয়ে ধূল ঝেড়েছে চেপা রাস্তার চল্লিশ বাই ষাট আংটির দোকানের, টাকার খোঁজে, এই শহরে।
আমার কাছে স্বপ্নের ঢাকা, স্বপ্নের মতোই, ভঙ্গুর খুব।
তাছাড়া, এমন শহরতো আমারো নয়। কোথায় আমার ভাষার মানুষ, সবুজ চাদর এই শহরে?
আমার বাবা ঘরে আসতেন ঠান্ডা রাতে,
গায়ের চাদর গালের উপর তুলে দিতেন নির্ভুলভাবে,
খাওয়ার পরে ভেজা হাতেই ভাবতে থাকি, কোথায় আমার মায়ের আঁচল এই শহরে?
কোথায় আমার শূণ্যদিকে হারিয়ে যাওয়া?
আমার দেশে অচেনা সব মানুষগুলো কতদিনের চেনা লাগে, কোথায় তারা?
আমার কাছে বর্ষাকালে বৃষ্টির রঙ ধূসর দেখায় এই শহরে।
আমার কাছে তোমার ঢাকা বড্ড বেশি করুণ লাগে।