
আপনার মেয়েকে চাইতে এসেছি (Here for your girl)
আমার হাত নিষপিষ করছে। পেটের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষিদে। পেট গুড়গুড় করবে বলে, আজ দুপুরে কিছু খাইনি। সামনে সামুচা রাখা, তেল জপজপ করছে। একটু আগে জয়নাল সাহেব ঘরে ঢোকার সময় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। উনার মেয়েকে চাইতে এসেছি আমি, দম থামা তো আছেই আমিতো চাইবো সময় টাই থেমে যাক।
সামুচা নিতে পারছি না। আনিলা কই? জয়নাল সাহেব গোটা ৫ মিনিটে এই প্রথম কথা বললেন। মেয়ের নাম মনেও আনতে দেয় না।
“কি করছো?”
বুকের ধাক্কা এখন বন্ধ। টেনশনে আমার বমি লাগে। প্রথম কথা এইটা না হয়ে অন্য একটা কিছু হলেকি খারাপ হতো?
“জ্বি, করছি না পড়ছি।”
“সেতো জানি। পড়তে পড়তে বিয়ের কথা বলতে এসেছো, আমি দেখে অবাক হই।”
“জ্বি, আংকেল।”
“আর, এমনি কি করছো?”
“লিখালিখি করি।”
“হুম, তোমার নাটক দেখেছি। ওই চ্যানেলে দেখেছি।
এই কথা শুনে আমি আত্মহারা। আংকেল টিভিতে নাটক দেখেছেন।
“কোন চ্যানেলেরটা, আংকেল?”
“ওই ‘বিডি নাটক মালা’ নাকি।”
“সরি?”
“ইউটিউবে, কি নাম চ্যানেলের মনে নাই।”
আমার হৃদয় ভেঙে গেলো। ইনিও ইউটিউবে দেখেন, আরো একটা অডিয়েন্স গেলো।
“আনিলা ধরে বেঁধে দেখিয়েছে। সে বলে, আমার ফ্রেন্ড এর নাটক। তখন আমি তো বুঝিনি, ইটিস গ্যাটিস ছক্কা পিটিস করো তোমরা।”
আমি একটা কাশি দি।
“কত কামাও। ৪০-৫০ তো হবেই।”
উনার এক্সপেক্টেশন দেখে আমি ঢোক গিলি।
“জ্বি, আংকেল। ওই রকমই।”
“মানে কি? পরিষ্কার ভাবে সব বলবা, ঠিক আছে? টাকার হিসাবে ওই রকমই বলতে কিছু নাই। সব টাইট। হয় এইটা, নাহলে ওইটা।”
“জ্বি,আচ্ছা।”
“কেনো তুমি আমার মেয়ের পিছনে পড়লা?”
“আংকেল, আসলে এই কেনো এর কোনো উত্তর নাই।”
“আগেই বলি টিভি-নাটক বা সিনেমার ডায়ালগ আমার সামনে মারবা না। এইবার বলো।”
“আসল কারণ টা বলবো?”
“ইউ মে।”
“ওর নাক টা আমার থেকে উঁচু।”
জয়নাল আংকেল আমার দিকে এখনো তাকাচ্ছেন, মনে হচ্ছে উনি তার নাক ফুলাচ্ছেন। বাবার নাক পেয়েছে মেয়ে।
“মশকরা?”
“সত্যি বলছি, প্রথম ধাক্কা ওর নাক দেখে খেয়েছি। এরিস্টোক্রাটিক নোজ।”
“আমাদের বংশে এমন আছে।”
“বোঝা যায়।”
“তুমি যে বিয়ের কথা বলতে আসলা, বাসায় জানে?”
“আম্মু জানে, তবে অফিসিয়াল না। আর, আব্বু জানে আম্মুর থেকেই।”
“ওফিসিয়াল আর অ-ফিসিয়াল মানে বুঝিনাই।”
“মানে, আম্মু আঁচ করেছে জিজ্ঞেসও করেছে কিন্তু আমার জানাইনি এখনো।”
“কি কমপ্লিকেশন।”
“জ্বি, আংকেল।”
“দেখো, এইভাবে একা আসলে হয় না। তুমি ছোট তাই আমি বুঝিয়ে বলছি। বড় হও। তারপর, এসো।”
“আংকেল, আমি আজকে এসেছি মানে কালকে বিয়ে করবো তা কিন্তু নয়। আমি শুধু এই টুকু বলতে এসেছি, আমি আবার আসবো। আমি জানি, আনিলা আমার জন্য অপেক্ষা করবে। কিন্তু, আপনাদের সাপোর্টের খুব করে দরকার। আমি ওয়াদা করতে এসেছি, আমি তখন আবার আপনার কাছে আনিলাকে চাইতে আসবো যখন আমি নিজে থেকে মনে করবো এইবার আমি আনিলার দায়িত্ব নিতে পারবো। তখন আর একা আসবোনা, বাবা-মা কে অফিসিয়ালি নিয়ে আসবো। আমি শুধু চাই, আনিলার সাথে সাথে আপনারাও একটু অপেক্ষা করেন।”
“তুমি যে সাইন করবা ফিউচারে তার গ্যারান্টি কিভাবে দিচ্ছো?”
“য়াংকেল, যে ছেলের ছায়ার সাথে আপনার মেয়ের ছায়া লেগে থাকে সেই ছেলের ছায়া দিয়েও আলো বের হয়। এর প্রমাণ আমি পাচ্ছি। আর, তাছাড়া আপনারা তো আছেন আমাকে ইন্সপায়ার করার জন্য। বলেন, করবেন না ইন্সপায়ার?”
“আবার ডায়ালগ. তুমি মানুষের ইমোশনে আঘাত করতে পারো, আমাকে পারবানা।”
“জ্বি, আচ্ছা।”
“আমি উঠলাম, আসত এর আযান দিবে। সামুচা খাও।”
“জ্বি, ধন্যবাদ।”
জয়নাল সাহেব উঠে চলে গেলেন। আমি সামুচায় হাত দিলাম। জয়নাল সাহেব দরজা থেকে ফিরে দাঁড়ালেন।
“নামায পড়না?”, উনার জিজ্ঞাসা।
“মাঝে মাঝে।”, আমার আকুতি।
“আগে এইটা ঠিক করবা, তারপর মেয়ে চাইতে আসবা।”
“জ্বি।”
উনি বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলেন।
“ডিসগাস্টিং জেনারেশন। নাক দেখে, নিয়ত দেখেনা।”
কিছু মনে করলাম না। এইসব শুনে আমি অভ্যস্ত। সামুচায় প্রথম কামড় দিলাম। খুব গরম। যে কোনো গরম কিছুর একটা একক আওয়াজ আছে, “আহ” আর “উহ”। আমার মুখ থেকে সেইটা বের হলো। গরমের ঠেলায় সামুচা মুখ থেকে বের করে হাতে ধরতে হলো। আমাকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে ফেললেন, রুনা আন্টি। আনিলার মা। উনি ঘরে ঢুকেই বললেন,
“তোমাকে তো ভালো ছেলে ভেবেছিলাম। তলে তলে তুমি টানেল বানিয়ে রেখেছো, আমি বুঝিনি।”
“আন্টি সালাম নেন। আসলে, আমি আর আনিলা টানেলের খবর কাউকে জানতে দিনি।”
“বয়স কত তোমার? আনিলার থেকে বড়তো নাকি?”
আমি ঢোক গিলি। মাথার মধ্যে ১১৫ সংখ্যাটা ঘুরছে। আরে, সেটা তো রবীঠাকুর এর বয়স।
“আন্টি, সেটা আনিলার সাথে ডিস্কাস করে বলতে হবে। ও আমাকে ঠিকই শিখিয়েছিলো। ভুলে গেছি।”
“বয়স মানুষ সেখায় নাকি? ঘাপলা কোথায়?”
(প্রথম পর্ব)