আমার এমন রোগ

আমার এমন রোগ

আমার মধ্যে এক রোগ বাস করছে,

সবকিছু মনে রাখার রোগ, মানুষ মনে রাখার রোগ;

আমার চোখের দেড়শ ডিগ্রির সীমারেখার মধ্যে আমি আজ পর্যন্ত যতজন মানুষকে বেঁধে রেখেছি,

তাদের সবার সাথে ছায়ার মতো লেগে থাকা একেকটি মুহূর্ত মনে রাখার রোগ;

বেশ কয়েক বছর ধরেই এমন একটি রোগে ভুগছি আমি,

এর কোনো কেমো নেই, থেরাপী নেই, আয়ুর্বেদ নেই, নেই কোনো ভ্যাক্সিন কিংবা এন্টিডট;

নিজেই নিজেকে কনসাল্ট করছি, রোজ মধ্যদুপুরে স্মৃতিসংঘের চেম্বারে আমার সাথে আমার দেখা হচ্ছে;

একই প্রেসকিপশন, সেই হেক্সশলের গন্ধ;

ওই প্রেসকিপশনে একই দাগের ওপর কলম ঘোরাচ্ছি;

মনবিদ্যা বলছে, এই রোগের একটাই ঔষধ পাওয়া গেছে আজ পর্যন্ত;

মৃত্যু।

হে বন্ধু ইরফান

হে বন্ধু ইরফান

~তোমার মতোই একদিন অভিনয় করা বন্ধ করে দেবে এই পৃথিবী, ও বন্ধু;

শেক্সপিয়ারের এই রঙ্গমঞ্চটায় আর কাউকে মিথ্যে অভিনয় করতে হবে না,

যেমনটি তুমি করোনি কখনোই,

তোমার চোখের মতো চোখ কথা বলবে সবার,

তোমার কষ্ট ভরা আওয়াজ ধ্বনিত্ব হবে পৃথিবী নামক এই থিয়েটারের আপার ক্লাস থেকে লোয়ার ক্লাসে,

ফ্রন্ট ডোর থেকে এক্সিট পয়েন্টে,

হাত তালিতে গমগম করবে পুরো দুনিয়া,

কারণ, তুমিতো সংলাপে একটাও মিথ্যে কথা বলোনি;

তুমি যেমনটা বলেছো, “সমুদ্রটাও আমি, এই গাছটাও আমি, ঝেলুম নদীটাও আমি, এসপেন গাছটাও আমি, আমি মন্দির, আমি সিয়া, আমি সুন্নী, আমি পন্ডিত, আমি সেখানে ছিলাম, এখানে আছি, আগামীকালেও থাকবো।”

শেষ বেলটা বেজে গেলো, হে বন্ধু;

আবারো তোমার নতুন চরিত্রের সংলাপ কানে বিঁধবে ইস্পলিন্টারের মতো, আবারো হাততালিতে গমগম;

তবে তোমার বুক চাপা কষ্ট নিয়ে দেয়া হাসিটা আর কেউ হাসতে পারবেনা,

আক্ষেপটা চলে যাক, তোমার সাথেই তোমার মতোই;

রুপ বদলাক, অবতীর্ণ হোক নতুন এক চরিত্রে;

যেমনটা তুমি হলে আজ, এতো নিঁখুতভাবে আগের মতোই।

হে প্রিয় বন্ধু ইরফান।~

বাম দিকের সিঁথি

বাম দিকের সিঁথি

কপাল বেয়ে চুয়েছিলো ভালোবাসার ঘাম,

আমি খুঁজে গিয়েছিলাম ফাঁকা এক গলি,

অষ্টেপৃষ্ঠে লেগে থাকা বুকের অভিমান,

ভুলতে বসা বিশ টাকার ওই দিনগুলি,

উদ্দেশ্যহীন রাস্তা-ঘাটে গিটারের সন্ধান,

ভাঙা তারে সুরের বড্ড বোঝ,

ডান দিকের ওই চুলের ভাঁজটা ঠিকই তো ছিলো,

এখন বাম দিকটায় কেনো করছো সিঁথি রোজ?

কতটা রঙ লাগবে তোমার; আমি রঙিন করতে চাই,

ভেজা ভেজা সন্ধ্যা বেলাকে,

লুকিয়েছে আজ কোনো কবিতায়!,

এক গোপন আংটি আঙুলের ফাঁকে,

হাওয়া বদলে গেছে নাকি আমি বদলেছি?

এই বদলানোটাই রেখেছিলো খোঁজ,

ডান দিকের ওই চুলের ভাঁজটা ঠিকই তো ছিলো,

এখন বাম দিকটায় কেনো করছো সিঁথি রোজ।

আমাদের এসেছিলো বৈশাখ

আমাদের এসেছিলো বৈশাখ

আমাদের একবার নববর্ষ এসেছিলো, শুধু আমাদের জন্য এসেছিলো উৎকন্ঠার চাদরে মোড়ানো এক নতুন সকাল;

নতুন কড়কড়া নোটের মতো ভাঁজহীন পান্জাবী পরে ছবি তুলেছিলাম, তোমার ভীষণ লাজুক কাঁধে হাত রেখে;

সেই সকালে ছিলোনা কোনো মানা শোনবার তাড়া,

আমরা দিব্বি প্রখর রৌদ্রে গা ভিজিয়েছিলাম ঘামে,

চুড়ির কাটিজ কিনিয়েছিলাম হাত ছুঁয়ে দেখবার নামে,

পাশাপাশি হেঁটে বুঝেছিলাম হৃদকম্পনও হঠাৎ থামে,

সেদিন আমাদের জন্য এক বৈশাখ এসেছিলো।

চক্ষুলজ্জার ভয় না করে বোরকা খুলে শরীরে শাড়ী জড়িয়ে সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিলো মাথায় রিং খোপা করা মেয়েটি,

রিক্সাওয়ালার কপালেও দেখা গিয়েছিলে জরির ফিতার বাঁধন, তাতে সাদা লাল রঙে লেখা ছিলো ‘নতুন বছরের শুভেচ্ছা’;

ইলিশ মাছের বাজার দেখে সেদিন মনে হয়েছিলো এ যেন এক দ্বিতীয় হাসরের ময়দান,

আজ এক নিরব বৈশাখের দিনে মনে পরে, সেদিন আমাদের ঠিকানায় এসেছিলো এক চেনা বৈশাখের দিন,

আবার ফিরে আসবার কথা দিয়ে।

আমাকে বেঁধে ফেলেছে

আমাকে বেঁধে ফেলেছে

~”দুপুর আড়াইটের হারানো বিজ্ঞপ্তি দেয়া অনিশ্চিত খবরের বিরতির ফাঁকে,

আমায় বেঁধে ফেলেছে অনিশ্চয়তা।

আমায় বেঁধে ফেলেছে দূরত্বের রঙিন সূতো,

সময়কে বেঁধে ফেলেছে এই শহরের চার দেয়ালগুলো।

বেঁধে ফেলেছে প্রতিদিনকার একইসব চেহারা,

তাদের মনের লুকানো ভয় না দেখানোর একমাত্র শর্তে,

বড্ড অভিনয় করবার শখ আমাদের ছিলো,

আমরা ব্যস্ততার অভিনয় করে বেরাতাম নিজেদের সাথে,

আজ সেই ব্যস্ততা আমাদের বেঁধে ফেলেছে,

অনির্দিষ্টকাল পর ফিরে আসার একমাত্র শর্তে।

আমাদের বেঁধে ফেলেছে লোভ কিংবা পশুত্ব কিংবা মনুষ্যত্বহীনতা,

খেতে দিতে না চাওয়াই আমাদের বিনোদনের একমাত্র উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে,

যে সুখ খুঁজতে বেড়িয়েছিলাম ঘরে আবার ফিরবো বলে,

সেই ঘর বেঁধে ফেলেছে আবার আদমগুলোকে বাঁচানোর নামে।”~

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাংলাদেশ

১১.০৪.২০২০