একজন মানুষ তার জীবদ্দশায় কতকি না হতে চেয়েছে,
ছোটবেলায় পুতুল খেলা পাশের বাড়ির পিয়ু, কদম ফুলের মালা হতে চায়তো, আমি হতে চাইতাম তার গাঁথুনি,
শক্ত করে দু’হাত ধরে আমরা কতো ইচিং-বিচিং খেলেছি।
স্কুলে আমার ঠিক পাশেই জায়গা রাখতো নন্দী, একদিন শুনলাম সে নাকি ফিটকিরি হতে চায়,
ফিটকিরির যে বিশ্রী গন্ধ, সে বলেছিলো তার গা থেকে বেরিয়ে আসা ধূপের গন্ধের মতোই,
এই গন্ধের কারণে নাকি ক্লাসে কেউ খুব একটা মিশতে চায়না, ফিটকিরি হলে পানিতে সহজে মেশার মতো সেও সবার সাথে সহজে মিশে যেতে পারবে।
একদিন দুপুরে হুট করে দেখি, আমার প্লাস্টিক ব্যাট আর বলটা পাঁচ টাকার সনপাপরি হয়ে যেতে চায়ছে, শখের পেনসিল বক্সটা রাগ করে স্টোর রুমে চলে যেতে চায়ছে, সন্ধ্যেবেলায় কারেন্ট গেলে কেউ আর বাড়ির দরজা খুলছে না, রাতের দিকে রাগ ধরলে আমার আর কান্না পাচ্ছে না, স্বপ্নগুলো কুৎসিত হয়ে যেতে চায়ছে, শরীরটা বড় হতে চায়ছে।
তারপর থেকেই আমি আর সকালে উঠতে চাইনি, ঘামতে ঘামতে হাঁটতে হাঁটতে গলির মোড়ে পড়তে যেতে চাইনি,
তারপর থেকে কলেজ পাড়ায় দু’টি বছর এক পলকেই শেষ করে ফেলতে চাইনি।
আমি চাইনি আমার মতোই মফস্বলটাও বদলে যাক, ভেজা মাটির গন্ধ ফুরাক, কৃষ্ণচূড়ার গাছ কেটে যাক, হঠাৎ করেই শহর ছেড়ে মহানগরে ঢুকে পরতে আমি চাইনি।
আমি অপুর সংসারের এক দিকে সিঁথি করা, ট্রেন দেখলেই কান চেপে ধরা বিরক্ত অপু হতে চাইনি কখনো,
আমার জীবনের অপর্নাকে কখনো বলতে চাইনি, “তোমার অনুশোচনা হয় না?”
এক মুহূর্তের হাজার রকম অর্থ-মানে খুঁজতে চাইনি, অংকে কাঁচা ভালোই ছিলাম, অল্প-বেশী গোটা-খুচড়ো টাকার গণিত বুঝতে চাইনি।
আজ সকালে কাল সকালের ক্যালেন্ডারে দাগ পরেছে,
ভুলতে বসুক সবাই আমায়, এমন হঠাৎ মন করছে
কতবার গেছি ভুলতে আমিও, তোমার শহর ভুলতে দেয়নি
“কে আমি?” আর “কিসের জন্যে?” এমন প্রশ্ন শুনতে চাইনি।