Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

 

আমি তখন ক্লাস ওয়ানে। প্লে, নার্সারি শেষ করে ওয়ানে উঠেছি। আমার খবরের কাগজ পড়ার ঝোঁক ছিলো। ক্লাস ওয়ানে উঠে আমি বাংলা এবং মাঝে মধ্যে ইংরেজি পেপার পড়তাম বলে, সবার কাছে প্রশংসা শুনতাম। স্পেশালি, আম্মু ব্যাপারটা খুব এনজয় করতো (আম্মু আমার আগে থেকে ফ্যান কিনা)। সবার সামনে বলা হতো, এই বয়সে আমি কত মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়ি।

আসলে, নানু বাসায় গেলেই আমি দেখতাম সকাল বেলা র’চায়ের উত্তপ্ত ধোঁয়ার মধ্যে একাকার নানুর চশমা পড়া চোখ পিটপিট করতো আর সেই চোখ দিয়ে তিনি পেপার পড়তেন। আমি নানু ভক্ত সেই ছোট থেকে। উনি ক্রিকেট খেলার ভক্ত। নানু চোখে দেখতে না পেলে, আমি কমান্টেটার হয়ে যেতাম। ইংরেজিতে চিৎকার করে তাকে আপডেট দিতাম। উনি ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেন। সেই থেকে, আমার ইংলিশ স্পিকিংয়ে হাতে-খড়ি বলা চলে। নানু যখন পেপার পড়তেন, জোরে করে স্পিসিফিক কিছু আর্টিকেল পড়তেন। বিশেষত, উনার যেগুলো পছন্দ হতো। সেই থেকে, আমার নিউজপেপার পড়া শুরু হয়েছে। বাসায়, আমিও চা খেতাম আর নিউজপেপার পড়তাম। আম্মু বলতো, তার বাবার মতো লাগছে। আমার শুনে ভালো লাগতো।

মনে পড়ে, একজন মহিলা প্রতি সপ্তাহে আমাদের বাসাতে এসে নক করতেন। প্রতি সপ্তাহে। তার হাতে কিছু কাগজ থাকতো। তিনি প্রায় সিল্কের শাড়ি পড়তেন। আর, চোখে মোটা ফ্রেমের এক পুরানা হলদে চশমা। আর, চুলগুলো ভীষণ উষ্কখুষ্ক। উনি, এসে বাসায় ডাকতেন। সকালে আসতেন, কিন্তু আম্মু কলেজে থাকতো বলেই কথা বলতে পারতেন না। আমাকে কেমন আছি, এই সব জিজ্ঞেস করতেন। তারপর, আবার বিকেলে আসতেন। আম্মুর সাথে কথা বলতেন। কিছুদিন পর, উনি আসলেন। আমি বললাম, আম্মু নাই। তিনি ঠিক আছে বলে একটা পেপার দরজার ফাঁক দিয়ে আমাকে দিলেন। বললেন, আম্মু বা আব্বু আসলে দিতে। এইটা একটা সাপ্তাহিক খবরের কাগজ ছিলো। উনি বুঝতে পারেন নি, আমার মতো ক্লাস ওয়ানে পড়া একটা বাচ্চা নিউজপেপার হয়তোবা পড়তে পারে।

পেপারটার নাম আমার সঠিক মনে নেই। কিন্তু, সেটা স্থানীয় পেপার সেটা জানি। খুব পাতলা কাগজে ছাপিয়েছে। রঙ নেই। রঙ নেই দেখে প্রথমে হাত লাগাতাম না। কিন্তু, পরে সেইটা পড়তাম। আমি কিছুদিন পরেই লক্ষ্য করি, এই মহিলা আমাদের বাসাতেই শুধু আসেন না। আমার বাসার আশেপাশের প্রায় সব বাসায় গিয়ে নক করেন। পেপার দেন। কেউ নেয়, কেউ নেয়না। কেউ নিতে না চায়লে, হাসি মুখে তার ব্যাগ থেকে একটা মধুর কৌটো বের করতেন। মনে আছে, আমাকে উনি জিজ্ঞেস করেছিলেন “তুমি কি মধু খাও।” মধু আমার প্রিয় ছিলো। উনি আম্মুকে বলেছিলেন, “আপনার ছেলেটা মধু খায়। এই টা খুব খাঁটি মধু ভাবী। একটা নেন। আবার নেবেন।” এই মহিলাকে এলাকার সবাই যে খুব একটা পছন্দ করতো, তা নয়। বলতে শুনেছি, উনি নাকি খুব নাছোড়বান্দা। পরে, আমি জানতে পারি পেপারের অফিসে চাকরী করতেন আর মধু বিক্রি করতেন। ঘরে ঘরে নিউজপেপার বিক্রি করে বেতন নিতেন হয়তো বা। মহিলার হাসি কখনো শেষ হতে দেখিনি। এতো হাসতেন। বিশ্বাস করুন, তখন অসহায়ত্বের মানে না জানলেও বুঝতাম এইটা তার হাসির নিচে উঁকি মারে।

আমাদের বাসার দোতলায় ভাড়াটিয়ে দাদী থাকতেন। সেখানে, মৌমাছি বিশাল বড় বাসা বাঁধে। জাতীয় পত্রিকার মধ্যে তখন, ‘প্রথম আলো’ আর ‘দৈনিক সংবাদ’ হাতে পাওয়া শুরু করেছি। মৌমাছির ভয়ে বারান্দায় আর আমি যাইনি। হয়তো, সেই কারণে ওই মহিলাটিকে আর আমি দেখতে পাইনি কখনোই।