Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

 

শাড়ির লাল পাড়ে ঢেউ খেলানো শুভাসী,

হারিকেনের কাঠিটা মধ্যখানে অবস্থান করছে। বাসা থেকে দূরে আছি, তাই রাতের বেলা বাবার সেতারে তোলা বৃন্দাবানী সারাং এর আওয়াজ আর কানে আসে না। আসে শুধু ঝি ঝি’র ডাক। এই ডাককে সারাং এর তালের সাথে relate করার চেষ্টা করি। জোর করে। ‘জোর’ শব্দটা শুনলেই সেই ৮ বছরের বাচ্চা মেয়েটার কথা মনে আসে।

বাবলার চরের ফাটা জমির উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম। থেমে গেলাম। আসলে থেমে যেতে হলো। ফাটা জমির আইলটার পাশে বসে ছোট্ট সবুজ চারা মাটি দিয়ে দেবে দিচ্ছিলো মেয়েটা। খুব যত্ন করে করছিলো। বোঝা গেলো, এই মেয়ে যা করে খুব যত্ম নিয়ে করে। বড় হয়ে নিশ্চিত চারুকলায় ভর্তি হতে পারবে। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। পায়ে জোরে জোরে চাপ দিয়ে হাঁটলে যেমন ধাপ ধুপ ধাপ ধুপ আওয়াজ হয়, তেমন একটা আওয়াজ আমার কানে এলো। বাম পাশ ফিরে তাকালাম লাইন ধরে অনেক মানুষ আইলের উপর দিয়ে হেঁটে আসছে। প্রথমে ভাবলাম মেলার লোকবল। সামনে সেই শুকনো খিটখিটে লোকটা এই মেয়েটার সবুজ চারার উপর পা দাবিয়ে চলে গেলো। তারপর একে একে সবাই। নিশ্চিত হলাম, মেলা নয় অন্য কিছু। মেয়েটা তখনো বসে আসে। হঠাত একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা, মেয়েটার এক হাত ধরে টান দিলো। ইসস! হাত খুলে যাবে মনে হলো। মেয়েটার সাদা জামার হাতের কুঁচিটা ছিড়ে গিয়েছে। সে কাঁদছে। ‘জোর’ করে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

শুভাসী আমার ৬০০ টাকার চাকরী, তোমার হাতের চুড়ির সাথে আমার পাঞ্জাবী হাতার অহেতুক লেগে থাকা বাঁধন আর প্লেটে আম্মার মাখা ভাতের অর্ধেকটা সেদিন ফেলে কেনো চলে এসেছিলাম জানো? আমি চেয়েছিলাম সেই বাচ্চা মেয়েটা যেনো বড় হয়ে চারুকলায় ভর্তি হয়। স্বাধীন এক চারুকলায়। যে চারুকলায় সে পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি স্বরূপ যত্ন নিয়ে maskot বানাবে রাস্তায় ভিন্ন ভাষায় কথা বলা পুলিশের বেরিকেটের ভয় না করে। আমার হাতে স্টেইনগানের বদলে, আমি তার হাতে তুলি দেখতে চেয়েছিলাম।

হারিকেনের তেল শেষ হবে হবে হয়তো। না, অন্যান্য দিনের মতো আজকে বৃষ্টি হচ্ছে না। আমার মন খারাপ থাকলে বৃষ্টি হয়না। আজ আমার মন খারাপ। কারণ, আজ তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। যেখানে শেষ সেদিন তোমার চুড়ির সাথে লাগা আমার সাদা পাঞ্জাবীর হাতার অহেতুক বাঁধন খুলে চলে এসেছিলাম সেই গাব গাছটার নিচে গিয়েছিলাম। গাব গুলো গোলাগুলির ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। একটাও মাটিতে পড়ে নাই। আমাদের হাজার সন্ধ্যার সাক্ষী যে ছোট ব্রীজটা। আরে সেই ব্রীজটা, যেখানে ছোটবেলায় তুমি আর আমি পানিতে পাটকেল ফেলার competition করতাম। তারপর কলেজে উঠে আমরা পানিতে ফেলতে লাগলাম বাদামের খোসা। কলেজের শেষের দিনে আমরাই পড়ে গেলাম…..পানিতে নয় বরং প্রেমে। যে ব্রীজটাই দাঁড়িয়ে তোমার সাথে প্রেমে পড়েছিলাম, সেই ব্রীজটার কথা বলছি। ওটা আর নেই। উড়িয়ে দিয়েছি। গ্রেনেডের চাবিটা আমি খুলেছিলাম। শুভাসী, কি কষ্ট হচ্ছিলো আমার জিজ্ঞেস করবে না। দু’ফোঁটা নোনতা জল আমি ঠেকিয়ে দিচ্ছি এই বাক্যের শেষ দাঁড়িটায়, ছুঁয়ে দেখো এর উত্তাপ। সেই ব্রীজের উপর দিয়ে আসার সময় পাকি uniform পড়া দানবগুলো বোমার আঘাতে যখন উত্তপ্ত হয়ে জীবনের শেষ দিন দেখছিলো, সেই উত্তাপ অনুভূত হতে পারে তোমার হাতে।

এই ব্রীজ অপারেশনেই গিয়েছিলাম তোমাদের বাড়ির দিকে। একটা ভাঙা তালা ঝুলানো। বারান্দার মেঝেটা ঠান্ডা ছিলো। এতো ঠান্ডা আমি তোমার সামনে এসেও কখনো অনুভব করিনি। তোমাদের মেহমান বসার ঘরে ৯৯ টি রবের নামের যে পোস্টার, তার উপর হাত বুলিয়ে এসেছি। কতদিন আম্মা কোরআন পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে দেন না। সেটা স্পর্শ করে চোখ বন্ধ করে নিতেই মনে হলো আম্মা বলছেন,”কই দেখি এইদিকে আই।”

তোমাদের খাবার টেবিলের এক কোণায় পায়েস পড়ে ছিলো। লাল পিঁপড়ারা জেকে বসেছিলো। খালাম্মার রান্না করা পায়েস। আমি পিঁপড়া সরিয়ে চেখে দেখেছি। এক সপ্তাহের ক্ষুধা এক চিলতিতে মরে না। পাছে পিঁপড়াগুলার সংসার নষ্ট করে দিয়ে আসলাম। বেশীক্ষন থাকতে পারিনি। গুমোট বাড়িটাই তোমার ব্যবহার করা সুগন্ধির গন্ধ আমাকে তোমার ঘরের দিকে টানছিলো। উলটা রথের দিনে আমার কিনে দেয়া সুগন্ধি। তোমার হেচকা টানে, একটুর জন্য যেটা ভাঙতে বসেছিলো সেই সুগন্ধি। তোমার ঘরের দিকে পা বারাতেই কমান্ডার ইউনুস হাঁক মারলেন। বেরিয়ে গেলাম। তোমরা বাড়ির এইভাবে সব কিছু রেখে চলে গেছো দেখে একটু অবাক হলাম। আবার ভাবলাম, জীবন তো অমূল্য। যা গেছে আবার আসবে, জীবন নয়। কোথায় গেছো, কেমন আছো কিছু জানিনা। স্বাধীনতা খুঁজে পাওয়ার পর, তোমাদের খোঁজা শুরু করবো।

যে কলমটা দিয়ে তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে লিখছি, সেটি কমান্ডারের নকশা করার কলম। উনি খুঁজছেন। এতোক্ষণ হৃদয়ের নকশা আঁকা হলো, এবার হৃদয়ে বাস করা মানচিত্রের মুক্তির নকশা আঁকা হোক। যেখানেই থাকো, রাতের নগ্ন জোছনা দেখার জন্য হুটহাট বের হয়ে যাবানা। মুক্তিটা খুঁজে পাই, তোমার হাত ধরে একসাথে জোছনা মাটিতে নামিয়ে আনবো। সবুর করো।

ইতি,
যুদ্ধের Gun ওয়ালা।