সমাজ নিষিদ্ধ (Prohibited in the society)

সমাজ নিষিদ্ধ (Prohibited in the society)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

 

প্রেমে পড়া নাকি আজকাল খুব সহজ হয়ে যাচ্ছে?
তোমার আমার প্রেমিক স্বত্তা মৃত্যু বরণ করছে,
করেছি প্রেম হলুদ শাড়ীতে,
নীল রঙা পাঞ্জাবী,
তোমার মনেতে দরজা লাগিয়ে,
ভেতরে রেখেছি চাবি,

তুমি কে আমার আর যেই হও,
আমি ভুলে গেছি অগত্য,
আমাদের মাঝে দাঁড়িয়েই আছে,
সমাজ নিষিদ্ধ।

ওই টান চোখ আর যেই হোক,
আমি আঁকতে পারিনি আজো,
কেউ চাইনা আমার চোখ দুয়ারের,
অপ্সরীটাই সাজো,
বাড়ির সামনে আমিতো গিয়েছি,
ফুল হাতা সাদা শার্টে,
যেনো আমাকে তুমি বুঝে নাও,
ওই অন্ধকারের সাথে,

ওরা চাইনি তুমি ছাদে যাও,
মিছে দেয়ালে বয়েছে সত্য,
তোমার আমার প্রেম গালিচা,
সমাজ নিষিদ্ধ।

তুমি দূরে তাই আর দেখা নাই,
ধূলো জমেছে পোষ্টবক্সে,
সংসার আর পরিবার আজ,
ডুবেছে কেনো ethics এ,
ভালোবাসতে আর না বাসতে,
তুমি বলতে আমায় আসতে,
কেনো তুমিও ব্যস্ত হয়েছো,
আজ অন্যজনের কষ্টে?

পুরো রাতে ইনসোমেনিয়া সেজে,
হচ্ছো হৃদয়ে বিদ্ধ,
তোমাকে স্বপ্নে দেখতে পাওয়াও,
সমাজ নিষিদ্ধ।

আমি অল্পই ভালো আছি (I am fine this way)

আমি অল্পই ভালো আছি (I am fine this way)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

 

আমি অল্পই ভালো আছি,
হিসেবের রঙ কালো হয়ে বয়ে গেছে,
আমি অল্পই ভালো আছি।

অজস্র ভোর বেলা আর তবে জাগিয়ে তোলেনা,
চলমান দেহঘড়ি ভাঙা চাবি বইতে জানে না,
আজ সভ্য বলে কিছু নেই আর ধমনী তে,
স্বার্থ মানেই বেঁচে থাকা,
আর হাজারটা দিন শেষে রইবো এ মজলিসে,
যত হোক শেষ আয়ু রেখা,

আমি অল্পই ভালো আছি,
হিসেবের রঙ কালো হয়ে বয়ে গেছে,
আমি অল্পই ভালো আছি।

জল ভেজা কাঁচে আর ভাপা নাম লিখতে পারি না,
চিঠি খামে শত দামে কেনা ডাক জায়গা ধরে না,
ব্যথা বলে কোনো কিছু বেঁচে নেই পৃথিবী তে,
আক্ষেপে ডুব দিয়ে থাকা,
আর হাজারটা দিন শেষে রইবো এ মজলিসে,
যত হোক শেষ আয়ু রেখা,

আমি অল্পই ভালো আছি,
হিসেবের রঙ কালো হয়ে বয়ে গেছে,
আমি অল্পই ভালো আছি।

খসখসে চিঠি (Rough Letter)

খসখসে চিঠি (Rough Letter)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

 

প্রিয় শুভাসী,

কম্পিউটারের টিপ টিপ বা মোবাইলের ট্যাপ ট্যাপ শব্দের চেয়ে আখের ছোবড়া দিয়ে বানানো কাগজের উপরে তিনটা দোকান ঘুরে বের করা, বাজেটের থেকে বেশী দাম দিয়ে কেনা Classic Ink Pen এর খসখস শব্দ আমার বেশী প্রিয়। তাই, তোমাকে চিঠি লিখি।
এই শহরে পোস্টবক্স দেখলে জনার্দনের চায়ের দোকানের কথা মনে পড়ে। আগে যে শহরে ছিলাম, সেখানে তার চায়ের দোকানের পাশেই পোস্টবক্স টা ছিলো কি না। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার আমি চা খেয়ে চিঠি ফেলে যেতাম। এখন এই শহরে কাওরানের উলটো দিকে একটা পোস্টবক্স দেখি। তার রঙ আমার স্মৃতির মতোই লাল। এখানে আসার পর সেই বক্সে প্রায় দুই সপ্তাহ চিঠি ফেলেছিলাম। তোমার কোনো উত্তর না পেয়ে, খোঁজ নিয়ে দেখলাম যে তোমার শহরে পোস্ট অফিস এখন শুধুমাত্র টাকা জমা রাখার স্থান। Post man আর তালে তালে চিঠিতে খ্যাটর খ্যাটর করে সিল মারেননা। তাই আর চিঠি পাঠাইনি। তবে, লিখা ছাড়িনি।

চলে আসার সময় দুটো ওয়াদা করেছিলাম, মনে আছে? এক তোমাকে ভোলা চলবে না আর দুই চিঠি লিখবো। লিখে যাচ্ছি। এই চিঠি তো তোমাকে পোস্ট করা হবে না। তাই, আমার অর্ধেক ভাঙা (আদতে কিছু টা বেশী) কাপড়ের ড্রয়ারের দুই নাম্বার পাল্লায় কোণার দিকে সব চিঠিপত্তর রেখে দিবো ঠিক তোমার দেয়া পচতে থাকা সানগ্লাসের বাক্সটার উপরে।
আচ্ছা, তোমাদের বাসার উলটো দিকের মসজিদে পাঁচ ওয়াক্তের আযান কি এখনো একি রকম সুরে বাজে? আযানের সময় হুজুর সাহেব কি এখনো নাকে বেশী টান দেন?

তোমার বাবা কি এখনো প্রতিদিন ছাদে বসে বসে মেহেদি তুলেন আর দাঁড়িতে লাগান?
উনি এখনো কি দুপুরে শিঙাড়া এনে খাওয়ান?
তোমার মা কি আর পায়েস রাঁধেন না?

ছাদে গিয়ে চুপ করে আমার সাথে ফোনে কথা বলার সময় পাশের বাড়ির ছোট্ট মেয়েটা তোমাকে দেখে আর আপু আপু বলে চিতকার দেয় না?
তোমার বাসার সামনে সাইকেল নিয়ে পায়চারি করা আট বছরের ছেলেটা কি এখনো তোমায় দেখে লজ্জা পায়?
মোড়ের বয়স্ক লোকটার দোকান থেকে কি আর রিচার্জের কার্ড নাওনা?
চুল কাটাতে পার্লারে যাও? নাকি অনেকদিন হয় না?

ফিজিক্স প্রফেসরের ওই গলিতে গোলাপি ব্যাগ নিয়ে স্যান্ডেল খসখস করে হাঁটতে হাঁটতে আর যাওনা না?
এখনো কি হাফ খাওয়া চকোলেট ফ্রিজে থেকে থেকে expired হয়ে যায়?
মশারি কি এখনো টাঙাও?

আর ফালুদা? শেষ বার কবে বানিয়েছো?
আমাকে কি মনে পড়ে?
এখনো ফোন দিতে ইচ্ছা করে?
করেনা না?

নাই করুক। ফোন দিয়ো না তো। আমি আমতা আমতা করবো, তুমি নোনতা নোনতা করবে। তার থেকে বরং আমাকে চিঠি লেখো। আর সেই চিঠি রেখে দিয়ো ওই ড্রয়ারের মধ্যে যেখানে পচছে আমার দেয়া আংটির বাক্সটা।
পোস্টবক্স নাহয় খালি থাকলো। খাম ভরুক স্মৃতি দিয়েই।

ইতি,
Ink pen এর কালি শেষ।

যে কুয়াশায় ভয় ছিলো (The fog of fear)

যে কুয়াশায় ভয় ছিলো (The fog of fear)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

প্রিয় তুমি,

মনে আছে তোমার আঙুল জড়িয়ে রাখা শক্ত আঙুলটা কে? তোমাকে চিঠি লেখার স্বার্থে আজ সেই আঙুল আর অন্য কারো হাত ধরতে না পেরে ঝরনা কলমটা কে জড়িয়ে রেখেছে। সেই দিন আমার কালো রঙের জ্যাকেট, তোমার কালো রঙের শাল যেভাবে জড়িয়ে ছিলো আমাদের শরীর দুটো।

সামনে দিক অন্ধকার ছিলো। সোনালী ঘাস ছিলো ভেজা, শিশিরের অত্যাচারে। বাসায় মিথ্যে কথা বলে আমরা যে জায়গাটায় গিয়েছিলাম সেটা নাকি কোনো এক রাজার দালান ছিলো যেখানে রানি তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে পার করেছেন এই মায়া নগরী। তার মৃতদেহ নাকি পাওয়া গিয়েছিলো জানালায় মাথা রাখা অবস্থাতেই। সে জানালায়, যে জানালা দিয়ে ভেতরে আসার পথটা ভীষণ স্পষ্ট দেখা যায় । জানিনা আমি ঠিক মতো, জানার প্রয়োজন কার ছিলো পুরনো ইতিহাস। আমিতো তখন তোমার চোখে আমার ভবিষ্যৎ দেখার স্বপ্নে বিভোর। আর তুমি তোমার টা আমার টায়।

পরিত্যক্ত কালচে সবুজ দালানের গা দিয়েও ঘাম ঝড়ছিলো। সেই ভাবে, যে ভাবে শীতের সকালে বেরসিক বেমানান রোদ উঠলে আমার ব্যাচেলর লাইফের সস্তা ফ্ল্যাটের ছোট জানালার কাঁচ ঘামতো। তুমি কাঁপছিলে, শুকনো শরীর আর কতটাই সইতে পারতো তখন। আর আমি? ছেলে মানুষ হয়ে বলতে লজ্জা লাগার কথা, তবে আমার পেটে প্রজাপতি দৌড়াচ্ছিলো। ভয়ের প্রজাপতি। কেউ যদি…..

তোমার আমার নিশ্বাসের মাঝের সাড়ে চার ইঞ্চি জায়গায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সেই কুয়াশা, যে কুয়াশায় ভয় আছে।

সেই সোনালী ঘাসের রাজার রানীর দালান ঘেরা জায়গাটায় যাওয়ার জন্য সবার চোখ অন্ধকারে বন্দি রেখে আমরা পালিয়ে যে বাসটায় উঠেছিলাম, তার পোড়া পেট্রোলের গন্ধ নাকে বসবাস করছিলো ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না তুমি তোমার কালো শালটা আমার নাকে চেপে ধরলে, যাতে কিনা লেগেছিলো ‘Vitalis Brand’ এর perfume. বিশ্বাস করো আর নাই করো, যে খামে ভরে এই চিঠিটা রেখে দিবো সেই খাম আমি চাপা দিয়ে রেখেছি সেই perfume এর গোলাপি বোতল দিয়েই যার মুখটা ভেঙে গিয়েছিলো তোমার হাত থেকে পড়ে।

আমার হাত ছিলো তোমার সপ্তম কশেরুকার উপরেই, আর তোমার হাত ছিলো আমার এক গাদা চিন্তার চাপ বয়ে নিয়ে বেড়ানো কাঁধের উপর। আত্মা দুটোর মাঝের সাড়ে চার ইঞ্চি জায়গায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সেই কুয়াশা, যে কুয়াশায় ভয় আছে।

তোমার বাম চোখের কোণার আর ঠোঁটের ঠিক উপরের তিলটা আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলো। চিন্তা এইটা ছিলোনা যে তাদেরকে আমি ছুঁয়ে দেখবো কি না, চিন্তা এইটা ছিলো যে আমি ভাবছিলাম এই তিলগুলো দেখার সুযোগ যদি আর না আসে কখনও। এই ভোরের সময়ে এই দিকটায় কেউ আসেনি তখন দু-একটা চড়ুই পাখি ছাড়া। তুমি তোমার দুটো পা আমার দুটো পায়ের উপর রেখেছিলে, আর কানকে আমার ঠোঁট ভেবে বলেছিলে “কথা বলা কি মানা?”। উত্তর আমি ঠোঁট দিয়েই দিয়েছিলাম এই বলে,”তুমি সখী সাথে থেকো।”

তবে তোমার কান আর আমার ঠোঁটের মাঝের সাড়ে চার ইঞ্চি জায়গায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সেই কুয়াশা, যে কুয়াশায় ভয় আছে। হারানোর ভয়।

তুমি হয়তো কথা শুনতে পাওনি সেদিন। তাইতো আমার পাশের বালিশ, পাশের চেয়ার, ক্লান্ত কাঁধটা, শক্ত হাতটা, লেটার বক্স আর রান্নাঘরটা, টেলিফোন কল, পানসে সকাল, চুলায় কুকারের শেষ শিসটা এখনো শুণ্য হয়ে আছে। শুণ্য হয়েই শুরু করলো আরেকটা দিন। আর আমি শেষ করলাম আরেকটা চিঠি।

একটা খবর দিয়ে শেষ করি। আমি সেই রাণীর দালানে আর যাইনি। দালানটা বাকি দেবে গিয়েছে কুয়াশার তলে। যে কুয়াশায় ভয় ছিলো।

ইতি,
ভীতু আমি।

Gun ওয়ালার চিঠি (Letter of a gun man)

Gun ওয়ালার চিঠি (Letter of a gun man)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

 

শাড়ির লাল পাড়ে ঢেউ খেলানো শুভাসী,

হারিকেনের কাঠিটা মধ্যখানে অবস্থান করছে। বাসা থেকে দূরে আছি, তাই রাতের বেলা বাবার সেতারে তোলা বৃন্দাবানী সারাং এর আওয়াজ আর কানে আসে না। আসে শুধু ঝি ঝি’র ডাক। এই ডাককে সারাং এর তালের সাথে relate করার চেষ্টা করি। জোর করে। ‘জোর’ শব্দটা শুনলেই সেই ৮ বছরের বাচ্চা মেয়েটার কথা মনে আসে।

বাবলার চরের ফাটা জমির উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম। থেমে গেলাম। আসলে থেমে যেতে হলো। ফাটা জমির আইলটার পাশে বসে ছোট্ট সবুজ চারা মাটি দিয়ে দেবে দিচ্ছিলো মেয়েটা। খুব যত্ন করে করছিলো। বোঝা গেলো, এই মেয়ে যা করে খুব যত্ম নিয়ে করে। বড় হয়ে নিশ্চিত চারুকলায় ভর্তি হতে পারবে। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। পায়ে জোরে জোরে চাপ দিয়ে হাঁটলে যেমন ধাপ ধুপ ধাপ ধুপ আওয়াজ হয়, তেমন একটা আওয়াজ আমার কানে এলো। বাম পাশ ফিরে তাকালাম লাইন ধরে অনেক মানুষ আইলের উপর দিয়ে হেঁটে আসছে। প্রথমে ভাবলাম মেলার লোকবল। সামনে সেই শুকনো খিটখিটে লোকটা এই মেয়েটার সবুজ চারার উপর পা দাবিয়ে চলে গেলো। তারপর একে একে সবাই। নিশ্চিত হলাম, মেলা নয় অন্য কিছু। মেয়েটা তখনো বসে আসে। হঠাত একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা, মেয়েটার এক হাত ধরে টান দিলো। ইসস! হাত খুলে যাবে মনে হলো। মেয়েটার সাদা জামার হাতের কুঁচিটা ছিড়ে গিয়েছে। সে কাঁদছে। ‘জোর’ করে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

শুভাসী আমার ৬০০ টাকার চাকরী, তোমার হাতের চুড়ির সাথে আমার পাঞ্জাবী হাতার অহেতুক লেগে থাকা বাঁধন আর প্লেটে আম্মার মাখা ভাতের অর্ধেকটা সেদিন ফেলে কেনো চলে এসেছিলাম জানো? আমি চেয়েছিলাম সেই বাচ্চা মেয়েটা যেনো বড় হয়ে চারুকলায় ভর্তি হয়। স্বাধীন এক চারুকলায়। যে চারুকলায় সে পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি স্বরূপ যত্ন নিয়ে maskot বানাবে রাস্তায় ভিন্ন ভাষায় কথা বলা পুলিশের বেরিকেটের ভয় না করে। আমার হাতে স্টেইনগানের বদলে, আমি তার হাতে তুলি দেখতে চেয়েছিলাম।

হারিকেনের তেল শেষ হবে হবে হয়তো। না, অন্যান্য দিনের মতো আজকে বৃষ্টি হচ্ছে না। আমার মন খারাপ থাকলে বৃষ্টি হয়না। আজ আমার মন খারাপ। কারণ, আজ তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। যেখানে শেষ সেদিন তোমার চুড়ির সাথে লাগা আমার সাদা পাঞ্জাবীর হাতার অহেতুক বাঁধন খুলে চলে এসেছিলাম সেই গাব গাছটার নিচে গিয়েছিলাম। গাব গুলো গোলাগুলির ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। একটাও মাটিতে পড়ে নাই। আমাদের হাজার সন্ধ্যার সাক্ষী যে ছোট ব্রীজটা। আরে সেই ব্রীজটা, যেখানে ছোটবেলায় তুমি আর আমি পানিতে পাটকেল ফেলার competition করতাম। তারপর কলেজে উঠে আমরা পানিতে ফেলতে লাগলাম বাদামের খোসা। কলেজের শেষের দিনে আমরাই পড়ে গেলাম…..পানিতে নয় বরং প্রেমে। যে ব্রীজটাই দাঁড়িয়ে তোমার সাথে প্রেমে পড়েছিলাম, সেই ব্রীজটার কথা বলছি। ওটা আর নেই। উড়িয়ে দিয়েছি। গ্রেনেডের চাবিটা আমি খুলেছিলাম। শুভাসী, কি কষ্ট হচ্ছিলো আমার জিজ্ঞেস করবে না। দু’ফোঁটা নোনতা জল আমি ঠেকিয়ে দিচ্ছি এই বাক্যের শেষ দাঁড়িটায়, ছুঁয়ে দেখো এর উত্তাপ। সেই ব্রীজের উপর দিয়ে আসার সময় পাকি uniform পড়া দানবগুলো বোমার আঘাতে যখন উত্তপ্ত হয়ে জীবনের শেষ দিন দেখছিলো, সেই উত্তাপ অনুভূত হতে পারে তোমার হাতে।

এই ব্রীজ অপারেশনেই গিয়েছিলাম তোমাদের বাড়ির দিকে। একটা ভাঙা তালা ঝুলানো। বারান্দার মেঝেটা ঠান্ডা ছিলো। এতো ঠান্ডা আমি তোমার সামনে এসেও কখনো অনুভব করিনি। তোমাদের মেহমান বসার ঘরে ৯৯ টি রবের নামের যে পোস্টার, তার উপর হাত বুলিয়ে এসেছি। কতদিন আম্মা কোরআন পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে দেন না। সেটা স্পর্শ করে চোখ বন্ধ করে নিতেই মনে হলো আম্মা বলছেন,”কই দেখি এইদিকে আই।”

তোমাদের খাবার টেবিলের এক কোণায় পায়েস পড়ে ছিলো। লাল পিঁপড়ারা জেকে বসেছিলো। খালাম্মার রান্না করা পায়েস। আমি পিঁপড়া সরিয়ে চেখে দেখেছি। এক সপ্তাহের ক্ষুধা এক চিলতিতে মরে না। পাছে পিঁপড়াগুলার সংসার নষ্ট করে দিয়ে আসলাম। বেশীক্ষন থাকতে পারিনি। গুমোট বাড়িটাই তোমার ব্যবহার করা সুগন্ধির গন্ধ আমাকে তোমার ঘরের দিকে টানছিলো। উলটা রথের দিনে আমার কিনে দেয়া সুগন্ধি। তোমার হেচকা টানে, একটুর জন্য যেটা ভাঙতে বসেছিলো সেই সুগন্ধি। তোমার ঘরের দিকে পা বারাতেই কমান্ডার ইউনুস হাঁক মারলেন। বেরিয়ে গেলাম। তোমরা বাড়ির এইভাবে সব কিছু রেখে চলে গেছো দেখে একটু অবাক হলাম। আবার ভাবলাম, জীবন তো অমূল্য। যা গেছে আবার আসবে, জীবন নয়। কোথায় গেছো, কেমন আছো কিছু জানিনা। স্বাধীনতা খুঁজে পাওয়ার পর, তোমাদের খোঁজা শুরু করবো।

যে কলমটা দিয়ে তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে লিখছি, সেটি কমান্ডারের নকশা করার কলম। উনি খুঁজছেন। এতোক্ষণ হৃদয়ের নকশা আঁকা হলো, এবার হৃদয়ে বাস করা মানচিত্রের মুক্তির নকশা আঁকা হোক। যেখানেই থাকো, রাতের নগ্ন জোছনা দেখার জন্য হুটহাট বের হয়ে যাবানা। মুক্তিটা খুঁজে পাই, তোমার হাত ধরে একসাথে জোছনা মাটিতে নামিয়ে আনবো। সবুর করো।

ইতি,
যুদ্ধের Gun ওয়ালা।