Gun ওয়ালার চিঠি (Letter of a gun man)

Gun ওয়ালার চিঠি (Letter of a gun man)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

 

শাড়ির লাল পাড়ে ঢেউ খেলানো শুভাসী,

হারিকেনের কাঠিটা মধ্যখানে অবস্থান করছে। বাসা থেকে দূরে আছি, তাই রাতের বেলা বাবার সেতারে তোলা বৃন্দাবানী সারাং এর আওয়াজ আর কানে আসে না। আসে শুধু ঝি ঝি’র ডাক। এই ডাককে সারাং এর তালের সাথে relate করার চেষ্টা করি। জোর করে। ‘জোর’ শব্দটা শুনলেই সেই ৮ বছরের বাচ্চা মেয়েটার কথা মনে আসে।

বাবলার চরের ফাটা জমির উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম। থেমে গেলাম। আসলে থেমে যেতে হলো। ফাটা জমির আইলটার পাশে বসে ছোট্ট সবুজ চারা মাটি দিয়ে দেবে দিচ্ছিলো মেয়েটা। খুব যত্ন করে করছিলো। বোঝা গেলো, এই মেয়ে যা করে খুব যত্ম নিয়ে করে। বড় হয়ে নিশ্চিত চারুকলায় ভর্তি হতে পারবে। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। পায়ে জোরে জোরে চাপ দিয়ে হাঁটলে যেমন ধাপ ধুপ ধাপ ধুপ আওয়াজ হয়, তেমন একটা আওয়াজ আমার কানে এলো। বাম পাশ ফিরে তাকালাম লাইন ধরে অনেক মানুষ আইলের উপর দিয়ে হেঁটে আসছে। প্রথমে ভাবলাম মেলার লোকবল। সামনে সেই শুকনো খিটখিটে লোকটা এই মেয়েটার সবুজ চারার উপর পা দাবিয়ে চলে গেলো। তারপর একে একে সবাই। নিশ্চিত হলাম, মেলা নয় অন্য কিছু। মেয়েটা তখনো বসে আসে। হঠাত একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা, মেয়েটার এক হাত ধরে টান দিলো। ইসস! হাত খুলে যাবে মনে হলো। মেয়েটার সাদা জামার হাতের কুঁচিটা ছিড়ে গিয়েছে। সে কাঁদছে। ‘জোর’ করে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

শুভাসী আমার ৬০০ টাকার চাকরী, তোমার হাতের চুড়ির সাথে আমার পাঞ্জাবী হাতার অহেতুক লেগে থাকা বাঁধন আর প্লেটে আম্মার মাখা ভাতের অর্ধেকটা সেদিন ফেলে কেনো চলে এসেছিলাম জানো? আমি চেয়েছিলাম সেই বাচ্চা মেয়েটা যেনো বড় হয়ে চারুকলায় ভর্তি হয়। স্বাধীন এক চারুকলায়। যে চারুকলায় সে পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি স্বরূপ যত্ন নিয়ে maskot বানাবে রাস্তায় ভিন্ন ভাষায় কথা বলা পুলিশের বেরিকেটের ভয় না করে। আমার হাতে স্টেইনগানের বদলে, আমি তার হাতে তুলি দেখতে চেয়েছিলাম।

হারিকেনের তেল শেষ হবে হবে হয়তো। না, অন্যান্য দিনের মতো আজকে বৃষ্টি হচ্ছে না। আমার মন খারাপ থাকলে বৃষ্টি হয়না। আজ আমার মন খারাপ। কারণ, আজ তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। যেখানে শেষ সেদিন তোমার চুড়ির সাথে লাগা আমার সাদা পাঞ্জাবীর হাতার অহেতুক বাঁধন খুলে চলে এসেছিলাম সেই গাব গাছটার নিচে গিয়েছিলাম। গাব গুলো গোলাগুলির ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। একটাও মাটিতে পড়ে নাই। আমাদের হাজার সন্ধ্যার সাক্ষী যে ছোট ব্রীজটা। আরে সেই ব্রীজটা, যেখানে ছোটবেলায় তুমি আর আমি পানিতে পাটকেল ফেলার competition করতাম। তারপর কলেজে উঠে আমরা পানিতে ফেলতে লাগলাম বাদামের খোসা। কলেজের শেষের দিনে আমরাই পড়ে গেলাম…..পানিতে নয় বরং প্রেমে। যে ব্রীজটাই দাঁড়িয়ে তোমার সাথে প্রেমে পড়েছিলাম, সেই ব্রীজটার কথা বলছি। ওটা আর নেই। উড়িয়ে দিয়েছি। গ্রেনেডের চাবিটা আমি খুলেছিলাম। শুভাসী, কি কষ্ট হচ্ছিলো আমার জিজ্ঞেস করবে না। দু’ফোঁটা নোনতা জল আমি ঠেকিয়ে দিচ্ছি এই বাক্যের শেষ দাঁড়িটায়, ছুঁয়ে দেখো এর উত্তাপ। সেই ব্রীজের উপর দিয়ে আসার সময় পাকি uniform পড়া দানবগুলো বোমার আঘাতে যখন উত্তপ্ত হয়ে জীবনের শেষ দিন দেখছিলো, সেই উত্তাপ অনুভূত হতে পারে তোমার হাতে।

এই ব্রীজ অপারেশনেই গিয়েছিলাম তোমাদের বাড়ির দিকে। একটা ভাঙা তালা ঝুলানো। বারান্দার মেঝেটা ঠান্ডা ছিলো। এতো ঠান্ডা আমি তোমার সামনে এসেও কখনো অনুভব করিনি। তোমাদের মেহমান বসার ঘরে ৯৯ টি রবের নামের যে পোস্টার, তার উপর হাত বুলিয়ে এসেছি। কতদিন আম্মা কোরআন পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে দেন না। সেটা স্পর্শ করে চোখ বন্ধ করে নিতেই মনে হলো আম্মা বলছেন,”কই দেখি এইদিকে আই।”

তোমাদের খাবার টেবিলের এক কোণায় পায়েস পড়ে ছিলো। লাল পিঁপড়ারা জেকে বসেছিলো। খালাম্মার রান্না করা পায়েস। আমি পিঁপড়া সরিয়ে চেখে দেখেছি। এক সপ্তাহের ক্ষুধা এক চিলতিতে মরে না। পাছে পিঁপড়াগুলার সংসার নষ্ট করে দিয়ে আসলাম। বেশীক্ষন থাকতে পারিনি। গুমোট বাড়িটাই তোমার ব্যবহার করা সুগন্ধির গন্ধ আমাকে তোমার ঘরের দিকে টানছিলো। উলটা রথের দিনে আমার কিনে দেয়া সুগন্ধি। তোমার হেচকা টানে, একটুর জন্য যেটা ভাঙতে বসেছিলো সেই সুগন্ধি। তোমার ঘরের দিকে পা বারাতেই কমান্ডার ইউনুস হাঁক মারলেন। বেরিয়ে গেলাম। তোমরা বাড়ির এইভাবে সব কিছু রেখে চলে গেছো দেখে একটু অবাক হলাম। আবার ভাবলাম, জীবন তো অমূল্য। যা গেছে আবার আসবে, জীবন নয়। কোথায় গেছো, কেমন আছো কিছু জানিনা। স্বাধীনতা খুঁজে পাওয়ার পর, তোমাদের খোঁজা শুরু করবো।

যে কলমটা দিয়ে তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে লিখছি, সেটি কমান্ডারের নকশা করার কলম। উনি খুঁজছেন। এতোক্ষণ হৃদয়ের নকশা আঁকা হলো, এবার হৃদয়ে বাস করা মানচিত্রের মুক্তির নকশা আঁকা হোক। যেখানেই থাকো, রাতের নগ্ন জোছনা দেখার জন্য হুটহাট বের হয়ে যাবানা। মুক্তিটা খুঁজে পাই, তোমার হাত ধরে একসাথে জোছনা মাটিতে নামিয়ে আনবো। সবুর করো।

ইতি,
যুদ্ধের Gun ওয়ালা।

Inside of My Wife’s Womb

Inside of My Wife’s Womb

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

 

ছোটবেলায় যখন রাস্তার গর্তে জমে থাকা কাদাগুলোকে দেখতাম, মনে হতো স্কুল যাওয়ার আগে খেয়ে আসা Maltova বা Bournvita কেউ গুলে রেখেছে। একটু চিনি মিশালেই তা খাওয়া যাবে। আর এখন এই রাতে প্রচন্ড শিলা বৃষ্টির যুদ্ধের মাঝে, সেই কাদাগুলো যখন এইদিক ওইদিক ছিটছে সেগুলো দেখে আমার মোটেও ছোট বেলার সেই চিন্তা মাথায় আসছে না। দারুণ পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি আপনাকে উপন্যাসিক করতে বাধ্য। কাদা আর শিলার বৃষ্টি বৃষ্টি খেলার মধ্যে ব্যাপক অন্ধকারে একটা কালো রঙ এর AUDI ছুটে যাচ্ছে তুমুল বেগে।

গাড়ির driving seat এ আমি। অবশ্যই গল্প আমি লিখছি, দামী গাড়ি তে বসা আমার অধিকার। আর, পাশে ইয়া বড় পেট নিয়ে বসে আছে আমার সহধর্মিণী। প্রথমত, সে ইয়া বিশাল পেটের অধিকারী হলেও ইয়া স্বাস্থ্যবান নয়। দ্বিতীয়ত, আমরা long drive নামক পুরাতন তত্ত্বে খুব একটা আগ্রহী নই। তাও আবার, যদি তা হয় বৃষ্টির দিনে তবে আমি বাসাতে বসে হালকা হলুদ দিয়ে রান্না করা খিঁচুড়ি খেতে বিশ্বাসী। Long drive এ যেতে নয়। ভুলেও ভাবার কিছু নেই যে, আমি unromantic.

আমার প্রেম অন্য মাপের, তা সবাই একটু দেরী তে বোঝে। যাই হোক, ‘প্রথমত’ এর ব্যাপারটা ভাংছি। আমার স্ত্রীর ইয়া বড় পেটের কারণ, আমি নিজে। সে pregnant. আর ‘দ্বিতীয়ত’, স্বাভাবিকভাবেই খুব একটা filmy way তে এই অহেতুক মেঘ গর্জনের রাত এ তার হেতুক ব্যথা উঠে এবং আমি গাড়ি চালিয়ে তাকে hospital এ নিয়ে যেতে খুব আগ্রহ পোষণ করি। তাই, কাদা আর শিলার বৃষ্টি বৃষ্টি খেলার মধ্যে ব্যাপক অন্ধকারে এই কালো রঙ এর AUDI ছুটে যাচ্ছে তুমুল বেগে।

জীবনে সিনেমার একটু-আধটু ছোঁয়া থাকা ভালো। তার পরিমাণ যদি বেশী হয়ে যায়, তবে তা আর হাসি মুখে নেয়া যায়না। অন্তত, আমার স্ত্রী তো তা এই situation এ নিতেই পারছে না। তার মুখে একটাই dialouge, “ওহ” আর “আহ”। আমার মুখে আর মন্ডলে হাজার খানেক expression চলছে। “জান, এইতো almost there. সামনে ব্রিজটা পার হলেই…..খুব ব্যথা হচ্ছে না?” আমার স্ত্রী’র লাল চোখ আমার দিকে তাকানো, “না না, বাজারের ব্যাগে সাবান নাইতো তাই চিৎকার করছি আমি। জোরে চালাওঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅ।”

আমি নির্বিকার। গাড়ীর speed 110 এর কোলের উপর এসে বসেছে। ওইযে বললাম, filmy ব্যাপারটার মাত্রা খুব একটা বেশি থাকা ভালো না। Ironic ভাবে গাড়ী থামলো। কারণ আর কিছুই না, just ওই টায়ার ফেটেছে। আমার বউ আজকে তার সব দাঁত কড়মড়িয়ে ভেঙে ফেলবে, সেই ব্যাপারে আমি বাজি লাগিয়ে লক্ষপতি হতে পারি। এখন, সে নির্বিকার। না আমি গাড়ির দরজা খুলে টানা একটা দৌড় দিয়ে সংসার এর সকল অসহ্যপণা ত্যাগ করে পালাবো না, বাইরে বেরিয়ে যদি আমি এখন চাকা change করি তাহলে আমার golden সূতোয় সেলাই করা Armani Suit টা ভিজে জানালার গ্রিল মোছা নেকড়া হয়ে যাবে তাই ভেবে যে চাকা পালটাবো না তাও করবো না, বৃষ্টির মাঝে বেশী romantic হয়ে গিয়ে আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে “ওগো তোমাকে না মটু মটু লাগছে” এই কথাটাও বলবো না। আমি বেরিয়ে গিয়ে টায়ার পাল্টাবো।

হ্যাঁ, শিলার একেক টা আঘাত আমার suit এর একেকটা সূতোয় গিয়ে লাগছে। ব্যাপার না। আমি নিচে বসে বসে চাকা পাল্টাচ্ছি। আমার বউয়ের পুরানা dialouge উড়ে উড়ে কানে লাগছে, “জলদি……উফফ,পারিনা জলদি।”

হ্যাঁ, আবার গাড়ি তে উঠে বসেছি। আমি বউ এর পেটে হাত দিতেই গর্জন, “এখন কি তোমার বাচ্চার kick feel করার শখ জেগেছে? আমি মরে গেলাম মা আ আ আ আ আ আ আ আ আ। উফফ পারি না আর। জলদি চলোনায়ায়ায়ায়ায়ায়া।”

গাড়ির speed 110 এর কোঠা এখন পার করলো। আমি আমার বউয়ের মাথায় হাত বুলাচ্ছি আর গাড়ি চালাচ্ছি। থামলো গাড়ি, যাত্রা বাড়ি। আমার বউকে এতোটা শান্ত, যেহেতু আমি কখনো দেখিনি তাই ইচ্ছা করছে moment টা capture করতে। সে শুধু আমার দিকে মাথা ঘুরিয়ে দিলো চিৎকার। “আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া,মরে গেছি গোওঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅ।”

জ্বি হ্যাঁ, এখন গাড়ির তেল শেষ। But but but, as you know I will be a super dad গাড়ির পিছনের ডিক্কি তে দুইটা তেল এর ডিব্বা already সুন্দরম ভাবে সাজানো আছে। এইবার আমি এই suit খুলে ফেলে দিলাম। এই বৃষ্টির মাঝে নামলে আমার Dubai Imported Rolax টা ভিজে যে সোনালী রঙ এর ব্রেসলেট হয়ে যাবে সেটা নিয়ে আমি ভাবছিনা, Germany imported leather shoe টা কাদার মধ্যে লাফালাফি করে কাদার সাথে প্রথমে প্রেম পরে পরিণয় করে ধনী গরিবের বিয়ের মতো কাদাকে বিয়ে করে ফেলবে তা নিয়েও ভাবছি না, আমার Saudi থেকে আনা পারফিউম বৃষ্টির সাথে আগডুম বাগডুম খেলে হাওয়ায় মিশে যাওয়ার কথাও আমি ভাবছিনা। আমি দৌড়ে পেছনে গেলাম। পেছনে ডিক্কি যেই না উপরে তুলবো, আমার মাথায় আসলো drive seat এর নিচে লুকিয়ে থাকা ডিক্কির lock টাইতো খুলা হয়নাই। আমি আবার যেয়ে gate খুললাম, খুলতেই কানে শব্দ এসে দানা বাঁধলো। “আল্লাহ, আমায় তুলে নাও। এই বাচ্চা তুমি এইখানেই হইয়ে দাও। ওগো, তোমার বাচ্চাকে তুমি সামলে নিয়ো গোওঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅ।”

আমি কান দিলাম না। ডিক্কির lock টা খুলে আবার পেছন এ গেলাম। একটা তেল এর বোতল নিলাম। Filmy way তে ironic ভাবে এখন সেটার মুখ খুলছেনা। আমি আবার গাড়ীর ভেতর এসে মুখ খোলার মহৎ চেষ্টায় লেগে গেলাম। আমার বউ এর মুখ এ আল্লাহ আল্লাহ অব্যাহত আছে। আমি মুখ খোলার চেষ্টা করছি আর ভাবছি, আচ্ছা বোতল এর পুরোটায় গাড়িতে ঢেলে দিবো নাকি হিসেব করে hospital যেতে যতটুকু লাগে ততটুকু দিবো। এমন সময় বউয়ের চিৎকার, “দে,আমাকে তেল দে আমি তেল খাই……উফফ,আম্মুউউউউউ” হঠাত আমার মনে হলো, আমার বউ zombie হয়ে গেছে। তার চুলগুলো সামনের দিকে, খুব বাজে ভাবে নাচছে। সে, দাঁত চিপে আছে।

As you know, she is going to be a super mom আমি তাকে বললাম, “একটু চেষ্টা করে দেখো না সোনা, মুখটা খুলতে পারো কিনা।” সে দাঁত এ চিপে একটা টান দিয়েছে, আর ওমনেই ছিপিটা তালাক দিয়ে দিলো বোতল এর মুখ কে। এতোদিনে বুঝলাম, তার প্রতিদিন দুই বেলা ব্রাশ করা আসলেই একটি কার্যকরী প্রক্রিয়া। আমি খুব excited হয়ে দৌড়ে গিয়ে ট্যাংকিটা খুলে খুলেই বোতল এর তেল ঢালতে লাগলাম। ইসসসসসস! প্রতিবছর এই রাতকে আমি ‘বিপদ রাত্রি’ হিসেবে উদযাপন করবো। এই করিনু পণ, মুই এই করিনু পণ। বিপদ এর কথা খুব একটা বেশি ভাবতে নেই। তা আপনার পা এর নিচ এ এসে দাঁড়ালে আপনার কিচ্ছু করার থাকবেনা, mind it. হঠাত পা এর নিচে চোখ গেলো। আমি চিন্তা করতে করতে সব তেল রাস্তা তেই ঢেলে দিয়েছি। আমি আবার গেটে আসলাম, আবার পিছন টা খুললাম, আর একটা বোতল নিলাম, কতখানি তেল ঢালবো তা নিয়ে আবার ও চিন্তা করলাম, তারপর আমার বউয়ের মুখে বোতল লাগিয়ে ছিপি আবার খুলে দিলাম, তারপর গাড়ীতে এই তেল শান্তির ঢালন ঢেলে দিলাম।

Cause, as you know I will be a…..গাড়ী চালানো আবার শুরু। সাথে সাথে শুরু হলো আমার বউ এর dialouge/প্রলাপ/গালি/চিৎকার। এর সাথে যোগ হয়েছে আমাকে খামচানো। আমারও আর তর সইছেনা। ধুর, গুষ্টি। এবার একটানে hospital যাবো। এতো বেশী ভালো না। আমি তখন দাঁত চিপে গাড়ী চালাচ্ছি। আমার বউয়ের নিশ্চিত দুই-তিন টা সফেদ দাঁত ইতোমধ্যে শাহাদাত বরণ করেছে। সে পাগল হয়ে ঢলে পড়েছে আমার গায়ে। অবশেষে আমি গাড়ি থামালাম।

কোনো hospital এর সামনে না। এইটা একটা toll box. ব্রিজ এ ওঠার আগের সুসজ্জিত toll box. আমি আমার moneybag থেকে credit card টা বের করে দিলাম box এর মধ্যে বসে থাকা কালো চারকোণা ফ্রেমের চশমাওয়ালা লোকটা কে। উনাকে দেখে মনে হলো, আমার চশমাটা পাল্টাতে হবে। যাই হোক, আমার টোল ১২০ টাকা। “একটু জলদি করবেন, প্লিজ,” আমার গুরু গম্ভীর অনুরোধ। যদিও এইখানে অসহায়ের মতো কথাটা বলতে হতো। এখন ওইসব চিন্তার করার পর্যায় এ আমি নেই। আমি আমার বউকে শান্তনা দিতে লাগলাম। “উফফ, কই জলদি করুন।” Box থেকে উত্তর আসলো, “বৃষ্টির জন্য হয়তো network কাজ করছেনা, স্যার।” আমার বউ আবারো সেই দাঁত চিপে আমার দিকে কড়মড়িয়ে তাকালো, আমিও আমার দাঁত চিপে সেই ভদ্র লোকটার দিকে কড়মড়িয়ে তাকালাম। তিনি ভদ্রভাবে card টা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ফেললেন, “Sorry, Sir.”

আমি আমার মোবাইল টা বের করলাম। ব্যাংক এর পানশে মানের হটলাইন এ call দিলাম। ওইপাশ থেকে একটি মেয়ে বলতে লাগলো, “এক চাপুন, দুই চাপুন।” এই মেয়েটির আওয়াজ অল্প বয়সে শিক্ষক হয়ে যাওয়া আমার স্কুল জীবনের ইংলিশ এর সেই ম্যামটার মতো শুনতে মনে হলো। যাই হোক, এক-দুই চাপাচাপি off. As you know I am going to be a cool dad, আমি আমার শার্ট এর পকেট থেকে ১২০ টাকা সেই ভদ্র লোকের হাতে ধরিয়ে দিলাম। আমার বউ, একান্তে আমার সামনে চিৎকার করলেও মানুষ এর সামনে সে আমার সম্মান বোঝে। তাই সে শান্ত হয়ে আমার কানে এসে বললো, “এই টাকা টা আগে দিলে না কেনো?” আমিও আসতে করে বললাম “আমি AUDI নিয়ে দাঁড়িয়েছি। Card দেখিয়ে ভাব মারতে হবে না?” তারপর, accelerater এ দিলাম এক চাপ। কারণ, জানি এই বাক্য শোনার পর সে আমার সম্মানহানি করবে। কেউ আশে পাশে না থাকাটাই ভালো। চলতে লাগলো আমার গাড়ি, আর আমার বউয়ের ওই সেই একই ধাঁচ এর dialouge.

শিলা বৃষ্টি আরো জোরে শুরু হলো। আমি এখন মুডে আছি। ভাবছি বউকে বলবো কিনা, “এক কাপ চা হলে জমে ক্ষির।” না থাক। বৃষ্টিতে গিটার বাজানোর শখ আমার ছোটবেলার। এই বৃষ্টি দেখে সেই শখ উজবুক আগাছার মতো আবার জেগে উঠেছে। না, সেটাও নাহয় থাক। আমার বউ হয়তোবা এখন ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি আসতে করে রেডিও টা ছাড়লাম। বিশ্বাস করুন, ইহা আমার ষড়যন্ত্র নয়। এই শিলা বৃষ্টির রাত এ প্রথম frequency টাতেই শিলা কি জাওয়ানি বেজে উঠলো। আমি বন্ধ করে দিলাম। গাড়ির speed 130 এ। আমার বউ আবার প্রলাপ শুরু করেছে। এখন আবার যুক্ত হয়েছে, “বমি বমি। আমি বমি করবো, আমি বমি করবো।” আমি দাঁড়াও জান বলে seat এর পেছন এ হাত দিয়ে, একটা পলিথিন খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে পেছন এর seat এ কিছু একটা পেয়ে গেলাম। আমার বউয়ের মুখ এর সামনে ধরতেই সে হরহর করে বমি করে দিলো। তাকে টিস্যু দেয়ার জন্য, যেই না লাইট টা জ্বালিয়েছি ওমনি একটা থাপ্পড় আমার বাম গালে এসে লাগলো। আমার বউ এর চিল্লানি, “আমার imported Gucci bag টার মধ্যে আমাকে কেনো বমি করালি, কুত্তা।”

হ্যাঁ, তার বিকার এর অবস্থা এখন এতোটাই খারাপ যে তুই তোকারি তো খুব ভালো এখন সে dog ই তে ও নেমে এসেছে। আমি এখন এক হাত দিয়ে গাড়ী চালাচ্ছি। আমার অন্য হাত আমার গালের উপর নয়, বরং মুখ এর ভেতর নড়ে যাওয়া দাঁতটা ঠিক করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। অবশেষে, আমার গাড়ী থামলো।

হ্যাঁ,এইটা একটা hospital. আমি গাড়ি থেকে নামলাম। দৌড়ে গেলাম বউ এর গেটের দিকে। যেই না তার গেট খুলতে যাবো, তেমনি বিদ্যুৎ চমকে গিয়ে আলো মারলো এই বিদ্যুৎহীন hospital এর ব্যানারের সামনে। আমি দৌড়ে এসে driving seat এ বসে আবার গাড়ীটা start দিলাম। আমার বউ আবার শুরু, “কি করছো। আমাকে নামালে না কেনো। আমি আর পারছিনা যে।” আমার কাঁপুনি ওয়ালা কন্ঠস্বর বলে উঠলো, “বেবি, ওইটা শুধু শুধু hospital না। ওইটা ‘Mental Hospital’. আমার বউ আমাকে আবারো একটা ‘The Godfather’ type এর look দিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, “তো, আমাকে ওইখানে নামালি না কেনো। আমার এখন ওইখান এই যাওয়া উচিত। গুষ্টি কিলাই তোর গাড়ীর। থামা গাড়ী,হাইট্টা যামু।” আমি তাকে শান্ত করার এক অহেতুক চেষ্টা করলাম।

গাড়ী এইবার অত্যধিক বেগ ধারণ করেছে। তার সাথে অত্যধিক হারে বেড়েছে, আমার বউয়ের চিৎকার আর খামচানো। তবে, ঠিক উল্টোভাবে কমে গেছে বৃষ্টি। হঠাত করে আমার বউ দেখলো, আমি Central Hospital টা পার করে চলে যাচ্ছি। সে অত্যন্ত অবাক হয়ে আমার দিক এ তাকিয়ে বলতে লাগলো, “এই এই কি করছো। ওইতো ওইখান এ hospital. গাড়ী থামাচ্ছো না কেনো? দাঁড়াও, please আমি আর পারছি না।” আমি নির্বিকার। যত টা জোরে পারছি accelerater চাপছি। সে পাগলের মতো বলছে, “তুমিকি পাগল হয়ে গেছো? থামাও গাড়ি। ওইযে hospital. গাড়ী থামাও।” সে চিৎকার থামাচ্ছে না। আমিও সাথে সাথে চিৎকার দিলাম, “Just shut up now.”

এইবার তার দিকে তাকালাম। বললাম, “আমার পা এর দিক এ তাকাও।” সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আমি আর পারছিনা সত্যি। গাড়ী hospital এ নিয়ে যাওনা তুমি।” আমি আবার ও বললাম, “আমার পা এর দিক এ তাকাও।”

আমার বউ অসহায় এর মতো তাকালো। আমি বললাম, “আমি এখন ঠিক যত জোরে break টায় চাপ দিয়ে গাড়ীটা থামাবো, ঠিক সেই চাপটা তুমি মনে রাখো।” এই কথা শুনে আমার বউয়ের কান্না আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। সে নিশ্চিত, এই স্বামীকে খুন করা ছাড়া আর উপায় নেই।

আমি অসহ্যরকম ভাবে ইংরেজীতে যাকে বলে ‘Abnormal’ ভাবে চাপ দিয়ে গাড়ীটা থামালাম। খুব স্বাভাবিকভাবে গাড়ী টা ঘুরে গিয়ে অবশেষ এ থেমে গেলো। তারপর, চারিদিকে কেয়ামত নিরবতা। আমি গাড়ী থেকে নামলাম। আমার বউ এর দিক এ গিয়ে gate খুলে তাকে বললাম, “আমার দিক এ তাকাও।” সে ভেজা চোখ এ নি:স্বাদ ভাবে আমার দিকে তাকালো। আমি তার seat টা পেছন এ ঠেলে দিয়ে কাত করলাম। তারপর বললাম, “মনে আছেতো আমি break এ কিভাবে চাপ দিয়েছিলাম? এইবার, তোমার পালা সোনা। Just, এক টা চাপ।”

আমার বউকে একসাথে এতোটা অবাক আর অসহায় আমি কখনো দেখিনি। হাজার রকম অনুভূতি সমেত কন্ঠে সে বললো, “Delivery কি তুমি করবা?”

আমি বললাম, “কথা না। Just push.” সে উপরের দিকে তাকিয়ে চোখ টা বন্ধ করে মুখ টিপে চাপ দেয়া শুরু করলো। আর, আমি এইদিকে চিৎকার করা শুরু করলাম, “Do it. You caaaaan dooooo it.”

সে অন্যদিকে চেঁচিয়ে যাচ্ছে, “Nooooooooooo”. এইদিকে আমি, “আর একটু চাপ, সোনা। Just push itttttt nowwwwwwww.” আমার বউ এর গাল দুই দিকে বসে গেছে, “ওহহহহহহ, পারছি না আমিইইইইইইইইইই।”

ওর না পারাটা যেনো আমাকে আরো সাহস দিলো। আমি নির্বিকার ভাবে বললাম, “তোমার জন্য এই পুরো রাতটাই একটা planned surprise. এইবার আমাকে return surprise টা দাও, জান। Please,pusssshhhh.” তার চিৎকার, “ওহহহহহহহহ, nooooo.”

আর আমি, “এইতো এইতো চলে এসেছে। Almost there almost there. আর একটু আর একটু Got it got it got it got it.”

জান্নাতের নিরবতা এই পৃথিবীতে। আর একটা বাচ্চার কান্না, আমার হাতে। গমগম করতে শুরু করলো, আধো আধো সকাল। দিনের প্রথম আলো এসে লাগলো আমার মেয়ের মুখের উপর। আমি দেখলাম, সে মুখ হাঁ করে কান্না করছে। আর, নতুন দিনের আলোর পবিত্রতা শুষে নিচ্ছে তার শরীর। আমার বউ এখন কাঁদছে। অবিশ্বাস্য পরিমাণ সুখ এ। আমি তার হাতে বাচ্চা তুলে দিয়ে পেছন এর ডিক্কি টা আবার খুললাম। And, as you know I will be an awesome dad and যেহেতু এইটা পুরোটাই একটা plan ছিলো তাই আমি প্রস্তুতি সব নিয়েই এসেছিলাম। ডিক্কি তে সব সরঞ্জাম রাখা আছে। আমি stick scissor টা নিয়ে আসলাম। নাড়ী টা কাটা লাগবে। ছোটবেলায় আব্বুর সাথে operation theater এ গিয়ে নাড়ী কাটা দেখার অভিজ্ঞতা কাজে লাগলো। বউ এর মুখ দিয়ে শুধু আওয়াজ বের হলো, “আউচ্চ।”

আমি দেখছি আমার বউ, তার পরের innings শুরু করেছে। তার, মা হবার innings. আমার ব্যাগ থেকে তাকে টাওয়েল দিলাম। সে বাচ্চাটাকে জড়িয়ে নিলো। আমার খুব ইচ্ছা করছে তিন জনকে এক সাথে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। না থাক, সে না হয় বাসাতে গিয়ে হবে। আমার বউ মেয়ের গাল টা টেনে দেখছে আর হাসছে। ঠিক এইটাই আমি চাইছিলাম। তাকে বললাম, “Surprise টা কেমন লাগলো?” তার মুখে এখন আর ক্লান্তি নেই। সে আমাকে মেয়েকে দেখিয়ে বললো, “আমার তোমাকে দেয়া surprise এর চেয়ে সুন্দর না।”

ভালোভাবে আলো ফুটেছে এখন। আমার গাড়ী একটা টিলার উপর দাঁড়ানো। নিচে সরু এক নদী বইছে। ফাঁকা মাঠ। আমি বউ কে বললাম, “তোমার জায়গাটা মনে পড়ে?” সে এতোক্ষণ জায়গাটা ভালো করে দেখলো। একের পর এক অবাক হতে হতেও সে ক্লান্ত। আমি বললাম, “তোমার আমার প্রাগৈতিহাসিক প্রেম কালের কোনো এক দিন এ এইখানে এসে আমরা আমাদের বাচ্চা-কাচ্চার হাজারটা নাম ঠিক করেছিলাম। কি, মনে নেই?

ভাঙা ফ্রেম আর অকেজো অপ্সরী (A broken frame and fairy)

ভাঙা ফ্রেম আর অকেজো অপ্সরী (A broken frame and fairy)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

 

-“তুই এই ধরনের বাজে অভিযোগ তোর বাবার opposite এ বলতে পারিস না।”

-“কেনো? যেটা হয়েছে সেটা কেনো বলতে পারি না? আমি নেহাতই তোমার মেয়ে বলে?”

-“তুই কিসের ভিত্তিতে এই সব বলছিস?”

-“তোমার ফোন log, মেসেজ লিস্ট। ফোন operate এ তুমি বরাবরই একটু কাঁচা।”

-“তোর লজ্জা করে না? তুই লুকিয়ে লুকিয়ে…..।”

-“তোমার লজ্জা করেনি, বাবা? মায়ের কাছে লুকিয়ে লুকিয়ে…..।”

বাবার সাথে এই conversation এর আমি একটু flash back এ যাই।

এই হোটেলটা অনেক rich. উচ্চবিত্ত পরিবার এর মেয়ে বলে, এইখানে প্রায়শই আসা যাওয়া লেগে থাকে আমার। তবে, আজ সন্ধ্যাটা অন্য আসা-যাওয়া সন্ধ্যার চেয়ে ভিন্ন। যে টেবিল এই দেখছি, হয় কাপল নাহয় বন্ধু-বান্ধব এ ভর্তি। As a couple কখনো আসা হয়নি আমার। “আমার বন্ধু’র সংখ্যা নেহাতই কম নয়” এই ধরনের কথা বলে আমি আমার উচ্চবিত্ত status এর পরিচয় দিতে চাচ্ছিনা আজকে। তবে, হ্যাঁ ওদের সাথেই এইখানে আসা হয় অনেক বেশী। আজ বিষয়টা একদমই উলটো। একটা দুই চেয়ার এর টেবিলে আমি বসা। যে লোকটার পাশের চেয়ারে বসে প্রতি রাতে ডিনার করি, আজ সে লোকটা আমার উলটো পাশের চেয়ারে বসা। আমার বাবা।

-“তুই আমাকে তোর মাকে না জানিয়ে এইখানে আসতে বলেছিস কেনো?”

বাবার এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে ভালোভাবে আছে। তবে, এই প্রশ্নের উত্তর নেহাতই উত্তর নয় বরং উলটো একটা প্রশ্ন। আমার হাঁটু লাফাচ্ছে অতি দ্রুত মাত্রায়। পা এর গোড়ালি, মাটিতে নেই। পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে ভর করে তা খাড়াভাবে দাঁড়ানো। আজ যথেষ্ট বড় স্কার্ট পড়েছি, তবুও অজানা কারণে আমি টান দিয়ে তা বড় করার চেষ্টা করছি। হাত ঘামছে অসম্ভব ভাবে। বাবার দিকে তাকানো দুর্বিষহ এই মুহূর্তে।

-“Sir, what would you like to have?”

ওয়েটারের আগমন।

-“I will just have a coffee. ওর জন্য একটা stick and apple juice. Make sure juice e যেনো extra ice না থাকে। আমার মেয়ে একদম পছন্দ করে না।”

-“Sure, Sir. 20 minutes.”

আমি এই মানুষটার দিকে এখন তাকাতে পারছি। গত মাসেও হাসি মুখে তার দিকে তাকাতাম। আর, আজ অবাক হয়ে। বাবা জানে আমি এইখানে আসলে কি খাই, কিভাবে খাই। আর, আমি তা জানতে পেরে অবাক। যখন বাস্তবের মুখোমুখি হতে হয় আমাকে, আমি নিজের কাছে নিজেকে অনেক ছোট ভাবি। বাবা কি সত্যি এমন?

-“10 minutes ধরে আমরা এইখানে। তুই চুপ। তোর যদি এইখানে আসার ইচ্ছা থাকতো, আগে বলতিস। তোর মাকেও নিয়ে আসতাম। লুকিয়ে লুকিয়ে কেনো? তুই কিছু বলবিনা?”

আমি আমার নখ এর সাথে নখ ঘোষা শুরু করে দিয়েছি। টেবিল এর মধ্যেখানে ছোট bowl এর পানিতে ভেজানো গোলাপের পাঁপড়ি আমাকে বলছে আমাকে একবার শুঁকে নিয়ে ভুলে যাও এই সব। কি দরকার শুধু শুধু অশান্তি ডাকার?

-“বাবা, তুমি এমন কেনো করেছো?”

-“কেমন কি? কি করেছি?”

-“আমার সাথে…..মায়ের সাথে, এমন কেনো করেছো বাবা?”

আমি বাবার দিক থেকে চোখ নামিয়ে নিচে রেখেছি আমার দৃষ্টিকোণ। দারুণ ভাবে বুঝতে পারছি, বাবা আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছে।

-“কি করেছি রে? তুই কি আমাকে খুলে বলবি?”

উফফ! আর থাকতে পারছি না। আমি এতোটা এসে কিভাবে পেছনে সরতে পারি? আমি বাবার দিকে তাকাই।

-“শায়লা আন্টি…..”

বাবা একটু পিছনে সরে যায়। তার পিঠ চেয়ারের গায়ে গিয়ে বাধা পায়। পেছনে হালকা হালকা মেজাজে চলা Jazz টা তার tone আরো কমিয়ে দিয়েছে।

-“হ্যাঁ, কি হয়েছে শায়লার?”

আমি পা এর আঙুল এইবার চিপে রাখি। দাঁত চিপে উত্তর দি,

-“মাকে ভুলে, আমাকে ভুলে…..তুমি শায়লা আন্টি কে…..”

আমি দারুণভাবে এক গ্লাস পানির অভাব বুঝতে পারি। সাত যুগের পিপাসী আমি। Stick আর apple juice এর বদলে পানি এখন আমাকে শান্তি দিবে। এক গ্লাস পানি খেয়ে, আমি দৌড়ে পালাতে চাইছি এখান থেকে হয়তো বা নিজের ই কাছ থেকে। বাবার চোখ আমার বুকের বাম পাশের ছোট ঘরটার জানালাটাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। এই ছোট ঘরে একটা তিনজনের পরিবার বাস করতো। এখন, শুধু আমি আর মা থাকি।

-“এইসব কি?”

-“সত্যি, বাবা। এইসব সত্যি।”

-“মানে, seriously. তুই এইটা চিন্তাও কিভাবে করতে পারিস?”

-“ঠিক এইটাই। ঠিক এইটাই ভেবেছিলাম আমি। আমি এইটা বরং চিন্তাও কিভাবে করতে পারি? কিন্তু, এইটা কি সত্যি না?”

-“তুই এই ধরনের বাজে অভিযোগ তোর বাবার opposite এ বলতে পারিস না।”

-“কেনো? যেটা হয়েছে সেটা কেনো বলতে পারি না? আমি নেহাতই তোমার মেয়ে বলে?”

-“তুই কিসের ভিত্তিতে এই সব বলছিস?”

-“তোমার ফোন log, মেসেজ লিস্ট। ফোন operate এ তুমি বরাবরই একটু কাঁচা।”

-“তোর লজ্জা করে না? তুই লুকিয়ে লুকিয়ে…..।”

-“তোমার লজ্জা করেনি,বাবা? মায়ের কাছে লুকিয়ে লুকিয়ে…..।”

-“স্যার, kindly please.”

আমার আর বাবার মাঝে বাঁধা এখন এই ওয়েটার। সে প্রথমে কফি টা টেবিলে রাখে। তার ধোঁয়া আমাকে চিন্তা করতে বাধ্য করে, ভবিষ্যতের কথা। এই ভাবেই কি তবে বাষ্প হয়ে উড়ে যাবো আমরা সবাই? তারপর, stick টা নামানো হয়েছে। তার গায়ে খাঁচ খাঁচ করে কাটা টুকরা টুকরা দাগ আমাকে মনে করিয়ে দেয় বাবার গায়ে লেগে থাকা টুকরো টুকরো কলংকের কালো দাগকে। তারপর, আসে apple juice. Extra ice না থাকায়, juice অনেক ঘন লাগে। বাবাকে কি আর ঘনঘন hug করা হবে না আমার?

-“Please, enjoy your meal.”

বাবা তার মাথা নাড়ায়। তারপর আবার আমার দিকে তাকায়। হঠাত তিন টেবিল পরে কারো spoon ফেলে দাওয়ার আওয়াজ পাই।

-“দেখ, তোর কথা মন থেকে ফেলে দে please.”

-“বাবা, ওই পড়ে যাওয়া চামচটার তিনটা কাঁটা আছে। ওইটা একসাথে লেগে আছে বলেই, চামচ টা useless নয়। সেটা যদি কাঁচের হতো। স্বচ্ছ, এপিঠ থেকে ওপিঠটা দেখতে পাওয়ার মতো? তাহলে, সেটা পড়লেই নি:শেষ। একদম ভেঙে যেতো পুরোটাই।”

-“তুই কি শুরু করলি বলতো। তুইকি আমার কথা শুনলি। এই সব খেয়ালি ছাড়। বাবার ব্যাপারে এই সব কি ভাবিস, এই মানুষ হলি তুই?”

-“আমরাও চামচ এর কাঁটার মতো তিনজন বাবা। তুমি, আমি আর মা। আজ, ‘সত্যি’ আমাদেরকে কাঁচের মতো স্বচ্ছ বানিয়ে দিয়েছে। এপিঠ-অপিঠ দেখা যাচ্ছে। যদি তা পড়ে যায়। তাহলে, তো…..”

বাবা, চুপ। তিনি অপরাধী। অপরাধীরা সাধারণত তেলপোকার মতো। তারা অপরাধ মাথা পেতে না নিয়ে, দৌড়ে পালিয়ে যেতে ওস্তাদ। কিন্তু, যেই না একবার অভিযোগের সত্যি বোঝার চাপে উলটে যায় ওমনি সব দাপট শেষ। তেলাপোকা উলটে গেলে যেমন সুরসুর আওয়াজ হয়, তেমন আওয়াজ আমার বাবার কাছ থেকে আসছে। তার নিশ্বাসের।

Jazz টা বেজে যাচ্ছে, নিজের তালে। টুং টাং প্লেটের সাথে চামচের আওয়াজ পুরো হল টা জুড়ে। সামনে রাখা খাবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। বলছে, খাও। আমি চোখ দিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টায় লেগে আছি, এখন এক ধরন এর অপরাধ বোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

আমি উঠে দাঁড়ালাম।

-“কোথায় যাচ্ছিস?”

-“জানিনা।”

-“খাবার টা খেয়ে নে।”

-“যাচ্ছি, বাবা।”

-“বস, মা। আমার কথাটা শোন একটু।”

-“এইখানে তোমার কথা শোনার জন্য, আমি তুমি কেউই আসিনি। এসেছিলাম আমার কথাগুলো বলতে। আমি তা শেষ করেছি।”

আমি ঘাড়ের ব্যাগটা ঘাড়ে তুলে নি। ব্যাগে একটা চিরুণী আর math book টা ছাড়া তেমন কিছু নেই। তবুও, এই কাঁধ আমার খুব ভারী লাগছে। যদি আমি আমি না হতাম, বাম দিক ভেঙে পড়তো খুব সহজে।

পেছন দিকে বাবা ডাকছে। আমি হাঁটছি দুই হাত মুষ্টি করে, দাঁত চিপে, সোজা তাকিয়ে, ভারী দু’টো পা নিয়ে।

রাত ৮টা। এই সময় বাসায় থাকি। ছাদে গিয়ে মা এর কোলে শুয়ে আকাশ দেখি। আজও আমি আকাশ দেখছি। এক গাদা অশান্তির কোলে শুয়ে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে। যত আগাই, পা ভারী হয়ে পড়ে।

-“ট্যাক্সি।”

আমি ট্যাক্সির মখমলে সিটের খাঁজেখাঁজে ঢুকে থাকা বাদামের দু’একটা খোসার একে অপরের সাথে লেগে থাকা দেখছি। অতি সাধারণ হয়েও তারা একসাথে। গাড়ির জানালার বাইরে, এই রাতে কি শুধু আমার জীবনেই ঘটেছে দু:খ আর বর্তমানের সহবাস? নাকি, অন্য অনেকের জীবনেও?

মা দরজা খোলে।

-“কি, রে? এতো দেরী? আজ কোন বান্ধবীর বন্ধু ছেড়ে চলে গেলো যে sympathy দিতে পৌঁছে গেছিলি? নাকি তুই নিজে কোনো বন্ধু পেয়ে গেছিস, হ্যাঁ?”

মা হাসছে। আমি আমার রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

-“তোর বাবা এখনো আসেনি। ফোন ধরছেনা।”

মা’র কথা মিলিয়ে যায়। আমি রুমে গিয়ে বসে পড়ি। দরজা বন্ধ। সব light বন্ধ করে, টেবিলের ল্যাম্প টা জ্বালাই। অন্য সব গল্পের মতো, এই গল্পেও টেবিলের একপাশে পুরো পরিবারের একটা ছবি। ল্যাম্পটার আলো উপরের সিলিং এ গিয়ে লাগছে।

পুরো সিলিং আলোকিত হচ্ছে না। হালকা হালকা। সেই আলো দেখতে দেখতে উপর পাশ হয়ে আমি বিছানায় শুয়ে পড়ি। খুব দুর্বল মনে হচ্ছে এখন নিজেকে। পা কাঁপছে। অনেক খিদে পেয়েছে আমার। সাথে ঘুম। আমার ক্লান্ত হাতটা টেবিলের উপর গিয়ে পড়ে। সাথে কাঁচ ভাঙার শব্দ। হয়তো photo frame টা পড়ে গেছে। না, কোনো এক ঘোরে আমি চোখ খুলে তা আর দেখতে যাইনি।

খুব গরম লাগছে এখন। চোখ খোলে। ফ্যান টা চালানো হয়নি। শরীর ঘেমে চ্যাটচ্যাটে ভাবে লেগে গেছে বিছানার সাথে। আমার চুলে গিটি লাগা। পেছন দিকটা ঘেমে গেছে। মাথা ব্যথায় চাড়তে পারছিনা। উঠে গিয়ে দরজা খুলি।

আমার মেয়ে পাশের ঘরে family photo টা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে যার মধ্যে আমি শেফন একটা শাড়ি পড়া, আমার কোলে সাদা আর গোলাপি আভার একটা স্কার্ট পড়ে ঘাড় সমান চুলে আমার মেয়ে, আর আমার পিঠ ছুঁয়ে যে হাতটা চলে গেছে সেটা আমার husband এর। তার মুখে হাসি, তবে একই সাথে মোহ।

সে এখনো আসে নি। ১০:৩০ তো তার বাসায় এসে জুতো খোলার সময়। আমি খাবার টেবিলে গিয়ে বসি।

কিছু রান্না করা হয়নি। কিছুদিন ধরে অতীত এসে ধরা দিচ্ছে। Stick আর apple juice খেতে খুব ইচ্ছা করছে। প্রচন্ড গরম।

একটা মটর বাইক বাসার সামনে এসে থামে। তারপর কলিং বেল এর চিৎকার।

কাচি গেট খুলে দি। ও দাঁড়িয়ে। সামনে চুলটা কপালের উপর। যদিও সে খুব একটা বিশাল স্বাস্থ্যের অধিকারী নয়, তবুও তার পেটের কাছের বোতামটা খোলা। তার সাথে বেল্টের শেষ অংশ একটা খাঁচে ঢোকানো নেই। সে আমার পাশে এসে গালে একটা চুমু বসিয়ে দেয়। তারপর আমাকে pass করে ভেতরে যায়। তার শরীর থেকে আসা বেলীফুল এর গন্ধ আমার লোম দাঁড় করিয়ে নেই। বেলীফুলে আমার এল্যার্জি আছে। আমি যতবারই বেলীফুল দেখেছি, তা প্রতিবারই TV তে কোনো না কোনো South Indian মহিলার চুলের খোঁপায়। South Indian ভাষা আমার বোধগম্য নয়। হয়ত, সেই কারণেই বিরক্ত লাগে বেলীফুল। সুগন্ধটাও যেন কেমন কেমন। দক্ষিণ ভারতীয় নারিকেলের মতো মিষ্টি নয়।

ওর শরীর থেকে বেশ কিছুদিন ধরে এমন অবোধ্য গন্ধ পাচ্ছি আমি। তারপর, সেদিন ডান কানে কেটে যাওয়ার দাগ। আসলে, ওর হেলমেট টা অনেক চাপা। পড়তে গিয়ে হয়তো বা লেগে গেছে। ওকে আমি জিজ্ঞেসও করেছিলাম। ও বলেছে, shave করতে গিয়ে নাকি কেটে গেছে। আমি বলেছি, না হেলমেট পড়তে গিয়ে। আমার কথাটাই ঠিক। এইটা হেলমেটের দাগ, অন্য কিছুর হতেই পারেনা। জানিনা কেনো, তখন সে শুধু একটা হাসি দিয়েছিলো। ঠিক আমার বাবার মতো করে মোহের হাসি।

আমি এইসব ভাবছি আর শাড়ির আঁচল পেঁচাচ্ছি। আমার পা সামনে আগাচ্ছে আসতে করে। তবে, এই হাঁটার ধপ ধপ আওয়াজ টা একটু বেশী জোরে হচ্ছে। আমার রুম এ যাবো। ও হয়তো এখন ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছে। বেলীফুলের গন্ধ মাখা শার্টটা ঝুলছে অপরাধীর মতো ক্লান্ত হয়ে।

আমার চোখ সেই রুমে গেলো, যেখানে আমার মেয়ে খেলছিলো। সে এখনো family photo ফ্রেম টা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। এই ছবির অর্থও কি তার কাছে অবোধ্য? আমি দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম। Show case টার উপর সে ফ্রেমটা রাখতে যাচ্ছে। আমার কপাল ঘেমে গেছে। ঘুম আসছে আবার ও। সেই দিনের রাতের মতো ক্লান্তও এখন। আমার মেয়ে frame টা কেবল রেখেছে আর আমি চোখের পলক ফেলেছি, ওমনেই কাঁচ ভাঙার আওয়াজ। সেইদিনের রাতের মতো আওয়াজটা। পলক ফেলে চোখ আর খুলতে ইচ্ছা করছে না। ঠিক সেদিন রাতের মতো। আগ্রহ আমাকে হার মানিয়েছে, আমি চোখ খুলে দেখলাম। আমার মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ফ্রেমের মধ্যে আমি, আমার মেয়ে আর সেও হাসছে। শুধু কাঁচটা গুড়িগুড়ি হয়ে ভাঙা, এই যা। আমার মেয়ে ছবি টা ভেঙে দিয়েছে। সে তা ঠিক মতো রাখতে পারেনি। ধরে রাখতে পারেনি। ঠিক যেমন আমি সেদিন ধরে রাখতে পারিনি কাউকে। বাঁচাতে পারিনি বাবা, মা আর আমার হাসি বেঁধে থাকা ছবিটার সুখের বসত, সেই ফটো ফ্রেমটা।

আপনার মেয়েকে চাইতে এসেছি (Here for your girl)

আপনার মেয়েকে চাইতে এসেছি (Here for your girl)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

আমার হাত নিষপিষ করছে। পেটের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষিদে। পেট গুড়গুড় করবে বলে, আজ দুপুরে কিছু খাইনি। সামনে সামুচা রাখা, তেল জপজপ করছে। একটু আগে জয়নাল সাহেব ঘরে ঢোকার সময় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। উনার মেয়েকে চাইতে এসেছি আমি, দম থামা তো আছেই আমিতো চাইবো সময় টাই থেমে যাক।

সামুচা নিতে পারছি না। আনিলা কই? জয়নাল সাহেব গোটা ৫ মিনিটে এই প্রথম কথা বললেন। মেয়ের নাম মনেও আনতে দেয় না।

“কি করছো?”

বুকের ধাক্কা এখন বন্ধ। টেনশনে আমার বমি লাগে। প্রথম কথা এইটা না হয়ে অন্য একটা কিছু হলেকি খারাপ হতো?

“জ্বি, করছি না পড়ছি।”

“সেতো জানি। পড়তে পড়তে বিয়ের কথা বলতে এসেছো, আমি দেখে অবাক হই।”

“জ্বি, আংকেল।”

“আর, এমনি কি করছো?”

“লিখালিখি করি।”

“হুম, তোমার নাটক দেখেছি। ওই চ্যানেলে দেখেছি।

এই কথা শুনে আমি আত্মহারা। আংকেল টিভিতে নাটক দেখেছেন।

“কোন চ্যানেলেরটা, আংকেল?”

“ওই ‘বিডি নাটক মালা’ নাকি।”

“সরি?”

“ইউটিউবে, কি নাম চ্যানেলের মনে নাই।”

আমার হৃদয় ভেঙে গেলো। ইনিও ইউটিউবে দেখেন, আরো একটা অডিয়েন্স গেলো।

“আনিলা ধরে বেঁধে দেখিয়েছে। সে বলে, আমার ফ্রেন্ড এর নাটক। তখন আমি তো বুঝিনি, ইটিস গ্যাটিস ছক্কা পিটিস করো তোমরা।”

আমি একটা কাশি দি।

“কত কামাও। ৪০-৫০ তো হবেই।”

উনার এক্সপেক্টেশন দেখে আমি ঢোক গিলি।

“জ্বি, আংকেল। ওই রকমই।”

“মানে কি? পরিষ্কার ভাবে সব বলবা, ঠিক আছে? টাকার হিসাবে ওই রকমই বলতে কিছু নাই। সব টাইট। হয় এইটা, নাহলে ওইটা।”

“জ্বি,আচ্ছা।”

“কেনো তুমি আমার মেয়ের পিছনে পড়লা?”

“আংকেল, আসলে এই কেনো এর কোনো উত্তর নাই।”

“আগেই বলি টিভি-নাটক বা সিনেমার ডায়ালগ আমার সামনে মারবা না। এইবার বলো।”

“আসল কারণ টা বলবো?”

“ইউ মে।”

“ওর নাক টা আমার থেকে উঁচু।”

জয়নাল আংকেল আমার দিকে এখনো তাকাচ্ছেন, মনে হচ্ছে উনি তার নাক ফুলাচ্ছেন। বাবার নাক পেয়েছে মেয়ে।

“মশকরা?”

“সত্যি বলছি, প্রথম ধাক্কা ওর নাক দেখে খেয়েছি। এরিস্টোক্রাটিক নোজ।”

“আমাদের বংশে এমন আছে।”

“বোঝা যায়।”

“তুমি যে বিয়ের কথা বলতে আসলা, বাসায় জানে?”

“আম্মু জানে, তবে অফিসিয়াল না। আর, আব্বু জানে আম্মুর থেকেই।”

“ওফিসিয়াল আর অ-ফিসিয়াল মানে বুঝিনাই।”

“মানে, আম্মু আঁচ করেছে জিজ্ঞেসও করেছে কিন্তু আমার জানাইনি এখনো।”

“কি কমপ্লিকেশন।”

“জ্বি, আংকেল।”

“দেখো, এইভাবে একা আসলে হয় না। তুমি ছোট তাই আমি বুঝিয়ে বলছি। বড় হও। তারপর, এসো।”

“আংকেল, আমি আজকে এসেছি মানে কালকে বিয়ে করবো তা কিন্তু নয়। আমি শুধু এই টুকু বলতে এসেছি, আমি আবার আসবো। আমি জানি, আনিলা আমার জন্য অপেক্ষা করবে। কিন্তু, আপনাদের সাপোর্টের খুব করে দরকার। আমি ওয়াদা করতে এসেছি, আমি তখন আবার আপনার কাছে আনিলাকে চাইতে আসবো যখন আমি নিজে থেকে মনে করবো এইবার আমি আনিলার দায়িত্ব নিতে পারবো। তখন আর একা আসবোনা, বাবা-মা কে অফিসিয়ালি নিয়ে আসবো। আমি শুধু চাই, আনিলার সাথে সাথে আপনারাও একটু অপেক্ষা করেন।”

“তুমি যে সাইন করবা ফিউচারে তার গ্যারান্টি কিভাবে দিচ্ছো?”

“য়াংকেল, যে ছেলের ছায়ার সাথে আপনার মেয়ের ছায়া লেগে থাকে সেই ছেলের ছায়া দিয়েও আলো বের হয়। এর প্রমাণ আমি পাচ্ছি। আর, তাছাড়া আপনারা তো আছেন আমাকে ইন্সপায়ার করার জন্য। বলেন, করবেন না ইন্সপায়ার?”

“আবার ডায়ালগ. তুমি মানুষের ইমোশনে আঘাত করতে পারো, আমাকে পারবানা।”

“জ্বি, আচ্ছা।”

“আমি উঠলাম, আসত এর আযান দিবে। সামুচা খাও।”

“জ্বি, ধন্যবাদ।”

জয়নাল সাহেব উঠে চলে গেলেন। আমি সামুচায় হাত দিলাম। জয়নাল সাহেব দরজা থেকে ফিরে দাঁড়ালেন।

“নামায পড়না?”, উনার জিজ্ঞাসা।

“মাঝে মাঝে।”, আমার আকুতি।

“আগে এইটা ঠিক করবা, তারপর মেয়ে চাইতে আসবা।”

“জ্বি।”

উনি বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলেন।

“ডিসগাস্টিং জেনারেশন। নাক দেখে, নিয়ত দেখেনা।”

কিছু মনে করলাম না। এইসব শুনে আমি অভ্যস্ত। সামুচায় প্রথম কামড় দিলাম। খুব গরম। যে কোনো গরম কিছুর একটা একক আওয়াজ আছে, “আহ” আর “উহ”। আমার মুখ থেকে সেইটা বের হলো। গরমের ঠেলায় সামুচা মুখ থেকে বের করে হাতে ধরতে হলো। আমাকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে ফেললেন, রুনা আন্টি। আনিলার মা। উনি ঘরে ঢুকেই বললেন,

“তোমাকে তো ভালো ছেলে ভেবেছিলাম। তলে তলে তুমি টানেল বানিয়ে রেখেছো, আমি বুঝিনি।”

“আন্টি সালাম নেন। আসলে, আমি আর আনিলা টানেলের খবর কাউকে জানতে দিনি।”

“বয়স কত তোমার? আনিলার থেকে বড়তো নাকি?”

আমি ঢোক গিলি। মাথার মধ্যে ১১৫ সংখ্যাটা ঘুরছে। আরে, সেটা তো রবীঠাকুর এর বয়স।

“আন্টি, সেটা আনিলার সাথে ডিস্কাস করে বলতে হবে। ও আমাকে ঠিকই শিখিয়েছিলো। ভুলে গেছি।”

“বয়স মানুষ সেখায় নাকি? ঘাপলা কোথায়?”

(প্রথম পর্ব)