আমাকে বেঁধে ফেলেছে

আমাকে বেঁধে ফেলেছে

~”দুপুর আড়াইটের হারানো বিজ্ঞপ্তি দেয়া অনিশ্চিত খবরের বিরতির ফাঁকে,

আমায় বেঁধে ফেলেছে অনিশ্চয়তা।

আমায় বেঁধে ফেলেছে দূরত্বের রঙিন সূতো,

সময়কে বেঁধে ফেলেছে এই শহরের চার দেয়ালগুলো।

বেঁধে ফেলেছে প্রতিদিনকার একইসব চেহারা,

তাদের মনের লুকানো ভয় না দেখানোর একমাত্র শর্তে,

বড্ড অভিনয় করবার শখ আমাদের ছিলো,

আমরা ব্যস্ততার অভিনয় করে বেরাতাম নিজেদের সাথে,

আজ সেই ব্যস্ততা আমাদের বেঁধে ফেলেছে,

অনির্দিষ্টকাল পর ফিরে আসার একমাত্র শর্তে।

আমাদের বেঁধে ফেলেছে লোভ কিংবা পশুত্ব কিংবা মনুষ্যত্বহীনতা,

খেতে দিতে না চাওয়াই আমাদের বিনোদনের একমাত্র উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে,

যে সুখ খুঁজতে বেড়িয়েছিলাম ঘরে আবার ফিরবো বলে,

সেই ঘর বেঁধে ফেলেছে আবার আদমগুলোকে বাঁচানোর নামে।”~

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাংলাদেশ

১১.০৪.২০২০

অতীত জেলে

অতীত জেলে

~”মানুষের অতীত জেলখানার মতো, সেখান থেকে ছাড়া পাওয়া ভীষণ মুশকিল;

আপনার অতীতের সাথে লেজোর লাগা চরিত্রগুলো সেই জেলখানার একেকজন জেলার,

প্রতি দিন তাদের ডিউটির পরিবর্তন ঘটে,

কিংবা হয়তো প্রতি সন্ধ্যেই তাদের জায়গা পাল্টায় অথবা ঘুমহীন বুক চেপে আসা কয়েক ঘন্টার প্রতিটি রাত্তিরে,

আপনাকে প্রায় কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, ঠিক তখন স্মৃতিগুলো আপনায় প্রশ্ন করে;

বিতর্ক চলে মনের বিরুদ্ধে মনের,

আপনি হেরে যেতে চান না,

হৃদয়ের বিরুদ্ধে হৃদয়ের,

আপনাকে প্রশ্ন করে বিরোধী পক্ষের বাদী, আপনার মস্তিষ্ক

আবেগের বিরুদ্ধে আবেগ,

তারপর বিরতি।

আপনি জানেন কোনো শুনানি হবে না,

আপনি জানেন ছাড়া পেতে কাউকে ঘুষ খাওয়াতে হবে না

শুধু নিজেকে বোঝাতে থাকবেন প্রতিটি ট্রায়ালে,

এইতো পাবো মুক্তি,

এইতো হবে এর শেষ,

তারপর অন্য কোনো অতীত জেলে অন্য কোনো জেলার,

অথবা ঘুমহীন বুক চেপে আসা অন্য কোনো রাত্রি।”~

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাংলাদেশ

১১.০৪.২০২০

লাশগুলো আর গন্ধ ছড়াচ্ছেনা

লাশগুলো আর গন্ধ ছড়াচ্ছেনা

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

~”আজকাল লাশগুলো আর গন্ধ ছড়াচ্ছে না, সময় পাচ্ছে কই?

ইকুয়েডরের রাস্তায় পরে থাকা অজানা লাশটাকে কে যেনো ফেলে রেখে চলে গেছে,

সেটিও প্রায় তিন স্তরের প্লাস্টিক দিয়ে প্যাকেটিং করা আছে,

ঠিক যেনো আমাজনের প্যাকিং করা কোনো পার্সেল, তবুও তাকে কেউ তুলে নিয়ে যাচ্ছে না;

কারণ, লাশটা আর গন্ধ ছড়াচ্ছে না।

গন্ধেই তো লাশের পরিচয়।

লাশগুলো নাকি ভাইরাসও ছড়াচ্ছে না,

তাহলেতো হলোই, প্রটেকশন পরে আর দাফন করতে হবে না;

বেঁচে গেলো কয়েকটা পিপিই,

আচ্ছা যদি কাফনের কাপড় বাদ দিয়ে পিপিই পরিয়ে লাশ দাফন করতে হতো?

এতোই যদি ভয়াবহ হতো এই ভাইরাস, তাহলে কি হতো?

যাক, এইসবতো আর হচ্ছে না;

আরো খারাপওতো হতে পারতো, এতো কিছু হচ্ছেনা মানে বিষয়টা ইতিবাচক;

আমাদেরকে ইতিবাচক থাকতে হবে,

কারণ, লাশগুলো আর গন্ধ ছড়াচ্ছেনা।”~

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাংলাদেশ।

০৯.০৪.২০২০

ধীরে, আস্তে, নিস্তব্ধতায়

ধীরে, আস্তে, নিস্তব্ধতায়

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

নিস্তব্ধ কোলাহল আজকাল প্রায় শুনতে পাই,

একটিবার ঘরের বাইরে যেতে চাওয়ার কোলাহল,

বন্ধ চায়ের টংয়ে ট্রান্সপারেন্ট কাঁচের গ্লাসের কোলাহল;

খুব নিস্তব্ধ।

রাস্তার ধূলোগুলোও কি বাতাসে উড়তে ভয় পায়?

বাতাসে লেগে থাকে গাড়ির কালো ধোঁয়ার কোলাহল,

হাজার রঙের মানুষগুলোর শ্বাস-প্রশ্বাসের কোলাহল,

আজকাল বাতাসে ভাসতে থাকে,

তবে খুব আস্তে, নিস্তব্ধতায়।

ক্লাসের বেণ্চিতে মাথা লাগিয়ে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটার হৃদকম্পনের কোলাহল,

পাঁচ মিনিট ব্যয় করা অংকটায় স্যারের খ্যাঁচ করে কেটে দাওয়া দাগের কোলাহল,

কলেজের বারান্দায় জমে যাওয়া শুকনো পাতার কোলাহল,

এসে কানে লাগে, খুব ধীরে, নিস্তব্ধতায়।

রেঁস্তোরায় টুংটাং চামচের শব্দ আর তোমার চুল কানের পেছনে গুঁজে দেওয়ার কোলাহলে,

নামাজ শেষে আঁতরের গন্ধ আর দুটো সাদা পান্জাবীর হরদম কোলাকুলির কোলাহলে,

অফিস পাড়ায় টিফিন চলাকালীন বিশ টাকার প্যাটিসে দু-চার কামড় বসানোর কোলাহলে,

কিংবা ক্রিকেট মাঠে, পথে-ঘাটে, গার্মেন্টসে, বস্তিতে অথবা রাজনৈতিক লেকচারের কোলাহলে;

আজকাল শব্দ দূষণ হচ্ছে ভীষণ,

তবে খুব ধীরে, আস্তে, নিস্তব্ধতায়।

আমাদের আবার দেখা হবে (We Will Meet Again)

আমাদের আবার দেখা হবে (We Will Meet Again)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

সহস্র বছর মানে ঠিক কতদিন?

অংকে আমি বরাবরই কাঁচা তবে,

মনের হিসেবে একদম ঝানু,

হোক শত সহস্র বা ততধিক, আমাদের আবার দেখা হবে

সুস্থ শহরের অসুস্থ মনা মানুষগুলোর ভীড়ে,

আমাদের আবার দেখা হবে।

যখন সমুদ্রের পাশে কেজি দরে বিক্রি হবে গোলাপী ডলফিনের মাংস,

আমাদের সেদিন আবার দেখা হবে।

আমরা ভুলে যাবো আজকের এই মহামারির কথা,

ভুলে যাবো বিশ্বে আকাল পরেছে মাস্ক, পিপিই কিংবা সাধারণ মনুষ্য জ্ঞানের

ভুলে যাবো অভাব পরেনি সেদিন একনিষ্ঠ ভালোবাসার,

দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?

আমাদের ভালোবাসা তো তবে বেড়েছে সরকারি ব্যাংকের সুদের হারে,

আবার যখন অর্থনৈতিক মন্দার চাপে জর্জরিত থাকবে ভাইরাসের কোলে মাথা দিয়ে ঘুমানো এই বিশ্ব,

আমাদের আবার দেখা হবে।