না চাওয়া সব চাওয়াগুলো (All The Unwanted Needs)

না চাওয়া সব চাওয়াগুলো (All The Unwanted Needs)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

একজন মানুষ তার জীবদ্দশায় কতকি না হতে চেয়েছে,

ছোটবেলায় পুতুল খেলা পাশের বাড়ির পিয়ু, কদম ফুলের মালা হতে চায়তো, আমি হতে চাইতাম তার গাঁথুনি,

শক্ত করে দু’হাত ধরে আমরা কতো ইচিং-বিচিং খেলেছি।

স্কুলে আমার ঠিক পাশেই জায়গা রাখতো নন্দী, একদিন শুনলাম সে নাকি ফিটকিরি হতে চায়,

ফিটকিরির যে বিশ্রী গন্ধ, সে বলেছিলো তার গা থেকে বেরিয়ে আসা ধূপের গন্ধের মতোই,

এই গন্ধের কারণে নাকি ক্লাসে কেউ খুব একটা মিশতে চায়না, ফিটকিরি হলে পানিতে সহজে মেশার মতো সেও সবার সাথে সহজে মিশে যেতে পারবে।

একদিন দুপুরে হুট করে দেখি, আমার প্লাস্টিক ব্যাট আর বলটা পাঁচ টাকার সনপাপরি হয়ে যেতে চায়ছে, শখের পেনসিল বক্সটা রাগ করে স্টোর রুমে চলে যেতে চায়ছে, সন্ধ্যেবেলায় কারেন্ট গেলে কেউ আর বাড়ির দরজা খুলছে না, রাতের দিকে রাগ ধরলে আমার আর কান্না পাচ্ছে না, স্বপ্নগুলো কুৎসিত হয়ে যেতে চায়ছে, শরীরটা বড় হতে চায়ছে।

তারপর থেকেই আমি আর সকালে উঠতে চাইনি, ঘামতে ঘামতে হাঁটতে হাঁটতে গলির মোড়ে পড়তে যেতে চাইনি,

তারপর থেকে কলেজ পাড়ায় দু’টি বছর এক পলকেই শেষ করে ফেলতে চাইনি।

আমি চাইনি আমার মতোই মফস্বলটাও বদলে যাক, ভেজা মাটির গন্ধ ফুরাক, কৃষ্ণচূড়ার গাছ কেটে যাক, হঠাৎ করেই শহর ছেড়ে মহানগরে ঢুকে পরতে আমি চাইনি।

আমি অপুর সংসারের এক দিকে সিঁথি করা, ট্রেন দেখলেই কান চেপে ধরা বিরক্ত অপু হতে চাইনি কখনো,

আমার জীবনের অপর্নাকে কখনো বলতে চাইনি, “তোমার অনুশোচনা হয় না?”

এক মুহূর্তের হাজার রকম অর্থ-মানে খুঁজতে চাইনি, অংকে কাঁচা ভালোই ছিলাম, অল্প-বেশী গোটা-খুচড়ো টাকার গণিত বুঝতে চাইনি।

আজ সকালে কাল সকালের ক্যালেন্ডারে দাগ পরেছে,

ভুলতে বসুক সবাই আমায়, এমন হঠাৎ মন করছে

কতবার গেছি ভুলতে আমিও, তোমার শহর ভুলতে দেয়নি

“কে আমি?” আর “কিসের জন্যে?” এমন প্রশ্ন শুনতে চাইনি।

আমি ফেরত যেতে চাই (I want to go back)

আমি ফেরত যেতে চাই (I want to go back)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

ব্রিটিশ কাল এই বাংলা ছেড়ে চলে গেছে ঠিকই,কিন্তু বিকাল ও সন্ধ্যার মধ্যবর্তী সময়টা তে আজও তারা বাস করে। আমি জানিনা,এই সমস্যা শুধু আমার হয় না কি অন্য দেরও কিন্তু এই নির্দিষ্ট সময়টা কিছুটা western western মনে হয়। Western মানে হানগামা নাচানাচি typeএর নয়,এটা খুবই শান্ত ও মন খারাপ ধরনের। মনে হয় সেই সময়ের কষ্টগুলো এই বিশাল শহরের বিশাল দালান ধরে ধরে কাঁদছে আবার মনে হয় সেই সময়ের সুখগুলো আমাদের দিকে তাকিয়ে বলছে,”কি? পারলেনা তো ধরে রাখতে?”

যখন গ্রাম এলাকায় যাই,এই জিনিসটা বেশী অনুভূত হয়। ধানের চাতালের ঠান্ডা মাটিতে বিরহ বাস করে। স্যাঁতসেঁতে দেয়ালে যখন শেষ সূর্যটা তার ছাপ রেখে যেতে চায়,হুঁ হুঁ করে কাঁদতে থাকে দেয়াল বেয়ে চুইতে থাকা পানি। আর সেটা দেশের যে জায়গায় হোকনা কেন,একি সময়ে প্রতিটা দিন একি ধরনের পাখি ডাকে। আমি বলে বুঝাতে পারবোনা সেটা কেমন,ঠিক যেমন বলে বুঝাতে পারবোনা সেটা হাসি নাকি কান্না সুখ নাকি বিরহ।

আব্বুর বকাঝকার ফলশ্রুতি তে নৌকায় চড়া কম হয়েছে। তবুও,শেষ বিকালে একবার নৌকায় চড়েছিলাম। খুব বড় হইনি তখনো। দু’টো জিনিস আমার ইন্দ্রিয়জয় করছিলো। শান্ত বিকালে বৈঠার সাথে পানির যুদ্ধের আওয়াজ আর ততটাই শান্ত ভাবের নদীর পাড়ের মাটির গন্ধ। আর কোনো কথা ছিলোনা। আচ্ছা,এইটা কি সুখ ছিলো নাকি এই জমিনের হাজারটা দিনের চেপে রাখা কষ্টের অল্প রকম আভাস।

ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে। যখন দাদী বাড়িতে যেতাম, বিশেষত ঈদে তখন ঠান্ডার সময় থাকতো। আঙিনায় এক পাশে হেঁসেল বা রান্নাঘর ছিলো। দাদী চিতাই বা ভাপাপিঠা বানাতেন। রান্নাঘরের উপরে লম্বা পাইপ দেয়া থাকতো। হ্যাঁ,এই ব্যাপারটা western. তো,সেই পাইপ দিয়ে ধোঁয়াগুলো কালচে হয়ে বের হয়ে যেত স্বাভাবিকভাবেই। অন্যরা সেই খোঁয়ার চোটে কাশিকে নিজের সংগী বানাতো ঠিকই,কিন্তু আমি তার মধ্যে এক ধরনের গন্ধ পেতাম। সেই ধোঁয়ায় একটা সুখ লাগতো,একটা নেশা লাগতো। মনে হতো,আমি প্রতিদিন সেই বিকাল-সন্ধ্যার মধ্যের সময়ে এই ধোঁয়া শুঁকতে থাকি নেশাখোরের মতো। আচ্ছা,এই কালো খোঁয়া কি আমাকে আসলেই সুখ দিয়েছিলো নাকি আমার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো বিরহ ইন্দ্রিয়?

আর একটা অতীত স্মৃতিতে ডুবতে চাইছি। ঢাকায় যেখানে থাকি সেখানে,৭ তলায় আমার বসবাস। Ground floor এ এই ভবনের বাচ্চারা খেলতে থাকে,চিতকার করে। এই চিতকার যেন একেকটা time machine এর ভূমিকায় অবতার হয়। আমাকে আমার ছোটবেলাতে নিয়ে যায়। আমি অনেক আদরের ছিলাম। বাসার সীমারেখার বাইরে ছোটবেলায় খেলার সুযোগ কম হয়েছে। তবে,মাঝে মাঝে যখন কোনো আত্মীয়র বাসায় যেতাম তখন লাগামহীন ঘোড়া ছিলাম। এমনি একজনের বাসার সামনে মাঠ ধরনের ছিলো। আমি শুনেছি,চাঁপাই নবাবগঞ্জ এমন একটা জেলা যেখানে মেয়ের সংখ্যা বেশী। এই অপ্রমাণিত তথ্য আমার বিশ্বাস হয়েছে। I am brought up with girls. অনেক লাজুক ধরনের ছিলাম। কিন্তু,ঘুরে ফিরে বেশীর ভাগ খেলতে হতো ওই আপু বা X Y এর সাথেই। তো,এমনি এক বিকাল সন্ধ্যার মধ্যের সময় ছিলো। যাদের বাসায় গেছি,সেও মেয়ে। আমার আজও মনে আছে,তার লাল একটা ফ্রর্ক ছিলো পড়া ছিলো তার পেছনে মাজার উপরে দু’টো ফিতা ছিলো। ওই যে থাকে না,ফ্রর্কটা টাইট করার জন্য। তো,আমি লজ্জায় কাহিল। সে বারবার তার এলাকার খেলার বন্ধুদের সাথে আমাকে মেশানোর চেষ্টা করছে। এখন ভাবলে আমি বুঝি,কত টা বেকুব ছিলাম। অনেক কষ্টে খেলতে নামলাম ‘বরফ পানি’ নাম এর বিখ্যাত খেলা। আমার মনে আছে,সেই মেয়েটা দৌড়াচ্ছিলো। এতো জোরে দৌড়াচ্ছিলো যে তার ফ্রর্ক এর ফিতা দুইটা উড়ছিলো। ছোট ফিতা বলে বেশী উড়তে পারছিলোনা ঠিকই। কিন্তু,আমার চোখে তা লেগেছিলো। এই জিনিসটা আমার মধ্যে এক ধরনের মোহ সৃষ্টি করেছিলো। আমার পা আটকিয়ে গেছিলো। একই সাথে কানে আসছিলো ওই পাখির আওয়াজ আর সন্ধ্যে বেলার মখমল ধরনের অদ্ভুত গন্ধ। কেউ আমাকে মোহের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমি ঘাসের উপর পড়ে ছিলাম। আর সেই ঘাস আর মাটির ছোঁয়া আমাকে বাধ্য করছিলো আমি যেন তাদের সাথেই মিশে যায়,সেখানেই যেন শুয়ে থাকি। বিশ্বাস করুন,আমার উঠতে ইচ্ছা করেনি। আচ্ছা সেই লাল ফিতা আর এই বেনামি মোহ কি আমাকে সুখ খুঁজে পাওয়ার ঠিক নির্দেশনা দিয়েছিলো,নাকি এটি ছিলো বারবার পড়ে যাওয়া দু:খের বার্তা?

আমি স্থিরতা অনুভব করছি,বাইরে যতটা স্থিরতা ভেতরটা ঠিক ততটাই অস্থির। আমি ফেরত যেতে চাই,উত্তর খুঁজতে।

দিন যায় (Day Goes By)

দিন যায় (Day Goes By)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

 

আমি তখন ক্লাস ওয়ানে। প্লে, নার্সারি শেষ করে ওয়ানে উঠেছি। আমার খবরের কাগজ পড়ার ঝোঁক ছিলো। ক্লাস ওয়ানে উঠে আমি বাংলা এবং মাঝে মধ্যে ইংরেজি পেপার পড়তাম বলে, সবার কাছে প্রশংসা শুনতাম। স্পেশালি, আম্মু ব্যাপারটা খুব এনজয় করতো (আম্মু আমার আগে থেকে ফ্যান কিনা)। সবার সামনে বলা হতো, এই বয়সে আমি কত মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়ি।

আসলে, নানু বাসায় গেলেই আমি দেখতাম সকাল বেলা র’চায়ের উত্তপ্ত ধোঁয়ার মধ্যে একাকার নানুর চশমা পড়া চোখ পিটপিট করতো আর সেই চোখ দিয়ে তিনি পেপার পড়তেন। আমি নানু ভক্ত সেই ছোট থেকে। উনি ক্রিকেট খেলার ভক্ত। নানু চোখে দেখতে না পেলে, আমি কমান্টেটার হয়ে যেতাম। ইংরেজিতে চিৎকার করে তাকে আপডেট দিতাম। উনি ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেন। সেই থেকে, আমার ইংলিশ স্পিকিংয়ে হাতে-খড়ি বলা চলে। নানু যখন পেপার পড়তেন, জোরে করে স্পিসিফিক কিছু আর্টিকেল পড়তেন। বিশেষত, উনার যেগুলো পছন্দ হতো। সেই থেকে, আমার নিউজপেপার পড়া শুরু হয়েছে। বাসায়, আমিও চা খেতাম আর নিউজপেপার পড়তাম। আম্মু বলতো, তার বাবার মতো লাগছে। আমার শুনে ভালো লাগতো।

মনে পড়ে, একজন মহিলা প্রতি সপ্তাহে আমাদের বাসাতে এসে নক করতেন। প্রতি সপ্তাহে। তার হাতে কিছু কাগজ থাকতো। তিনি প্রায় সিল্কের শাড়ি পড়তেন। আর, চোখে মোটা ফ্রেমের এক পুরানা হলদে চশমা। আর, চুলগুলো ভীষণ উষ্কখুষ্ক। উনি, এসে বাসায় ডাকতেন। সকালে আসতেন, কিন্তু আম্মু কলেজে থাকতো বলেই কথা বলতে পারতেন না। আমাকে কেমন আছি, এই সব জিজ্ঞেস করতেন। তারপর, আবার বিকেলে আসতেন। আম্মুর সাথে কথা বলতেন। কিছুদিন পর, উনি আসলেন। আমি বললাম, আম্মু নাই। তিনি ঠিক আছে বলে একটা পেপার দরজার ফাঁক দিয়ে আমাকে দিলেন। বললেন, আম্মু বা আব্বু আসলে দিতে। এইটা একটা সাপ্তাহিক খবরের কাগজ ছিলো। উনি বুঝতে পারেন নি, আমার মতো ক্লাস ওয়ানে পড়া একটা বাচ্চা নিউজপেপার হয়তোবা পড়তে পারে।

পেপারটার নাম আমার সঠিক মনে নেই। কিন্তু, সেটা স্থানীয় পেপার সেটা জানি। খুব পাতলা কাগজে ছাপিয়েছে। রঙ নেই। রঙ নেই দেখে প্রথমে হাত লাগাতাম না। কিন্তু, পরে সেইটা পড়তাম। আমি কিছুদিন পরেই লক্ষ্য করি, এই মহিলা আমাদের বাসাতেই শুধু আসেন না। আমার বাসার আশেপাশের প্রায় সব বাসায় গিয়ে নক করেন। পেপার দেন। কেউ নেয়, কেউ নেয়না। কেউ নিতে না চায়লে, হাসি মুখে তার ব্যাগ থেকে একটা মধুর কৌটো বের করতেন। মনে আছে, আমাকে উনি জিজ্ঞেস করেছিলেন “তুমি কি মধু খাও।” মধু আমার প্রিয় ছিলো। উনি আম্মুকে বলেছিলেন, “আপনার ছেলেটা মধু খায়। এই টা খুব খাঁটি মধু ভাবী। একটা নেন। আবার নেবেন।” এই মহিলাকে এলাকার সবাই যে খুব একটা পছন্দ করতো, তা নয়। বলতে শুনেছি, উনি নাকি খুব নাছোড়বান্দা। পরে, আমি জানতে পারি পেপারের অফিসে চাকরী করতেন আর মধু বিক্রি করতেন। ঘরে ঘরে নিউজপেপার বিক্রি করে বেতন নিতেন হয়তো বা। মহিলার হাসি কখনো শেষ হতে দেখিনি। এতো হাসতেন। বিশ্বাস করুন, তখন অসহায়ত্বের মানে না জানলেও বুঝতাম এইটা তার হাসির নিচে উঁকি মারে।

আমাদের বাসার দোতলায় ভাড়াটিয়ে দাদী থাকতেন। সেখানে, মৌমাছি বিশাল বড় বাসা বাঁধে। জাতীয় পত্রিকার মধ্যে তখন, ‘প্রথম আলো’ আর ‘দৈনিক সংবাদ’ হাতে পাওয়া শুরু করেছি। মৌমাছির ভয়ে বারান্দায় আর আমি যাইনি। হয়তো, সেই কারণে ওই মহিলাটিকে আর আমি দেখতে পাইনি কখনোই।