লাশগুলো আর গন্ধ ছড়াচ্ছেনা

লাশগুলো আর গন্ধ ছড়াচ্ছেনা

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

~”আজকাল লাশগুলো আর গন্ধ ছড়াচ্ছে না, সময় পাচ্ছে কই?

ইকুয়েডরের রাস্তায় পরে থাকা অজানা লাশটাকে কে যেনো ফেলে রেখে চলে গেছে,

সেটিও প্রায় তিন স্তরের প্লাস্টিক দিয়ে প্যাকেটিং করা আছে,

ঠিক যেনো আমাজনের প্যাকিং করা কোনো পার্সেল, তবুও তাকে কেউ তুলে নিয়ে যাচ্ছে না;

কারণ, লাশটা আর গন্ধ ছড়াচ্ছে না।

গন্ধেই তো লাশের পরিচয়।

লাশগুলো নাকি ভাইরাসও ছড়াচ্ছে না,

তাহলেতো হলোই, প্রটেকশন পরে আর দাফন করতে হবে না;

বেঁচে গেলো কয়েকটা পিপিই,

আচ্ছা যদি কাফনের কাপড় বাদ দিয়ে পিপিই পরিয়ে লাশ দাফন করতে হতো?

এতোই যদি ভয়াবহ হতো এই ভাইরাস, তাহলে কি হতো?

যাক, এইসবতো আর হচ্ছে না;

আরো খারাপওতো হতে পারতো, এতো কিছু হচ্ছেনা মানে বিষয়টা ইতিবাচক;

আমাদেরকে ইতিবাচক থাকতে হবে,

কারণ, লাশগুলো আর গন্ধ ছড়াচ্ছেনা।”~

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাংলাদেশ।

০৯.০৪.২০২০

ধীরে, আস্তে, নিস্তব্ধতায়

ধীরে, আস্তে, নিস্তব্ধতায়

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

নিস্তব্ধ কোলাহল আজকাল প্রায় শুনতে পাই,

একটিবার ঘরের বাইরে যেতে চাওয়ার কোলাহল,

বন্ধ চায়ের টংয়ে ট্রান্সপারেন্ট কাঁচের গ্লাসের কোলাহল;

খুব নিস্তব্ধ।

রাস্তার ধূলোগুলোও কি বাতাসে উড়তে ভয় পায়?

বাতাসে লেগে থাকে গাড়ির কালো ধোঁয়ার কোলাহল,

হাজার রঙের মানুষগুলোর শ্বাস-প্রশ্বাসের কোলাহল,

আজকাল বাতাসে ভাসতে থাকে,

তবে খুব আস্তে, নিস্তব্ধতায়।

ক্লাসের বেণ্চিতে মাথা লাগিয়ে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটার হৃদকম্পনের কোলাহল,

পাঁচ মিনিট ব্যয় করা অংকটায় স্যারের খ্যাঁচ করে কেটে দাওয়া দাগের কোলাহল,

কলেজের বারান্দায় জমে যাওয়া শুকনো পাতার কোলাহল,

এসে কানে লাগে, খুব ধীরে, নিস্তব্ধতায়।

রেঁস্তোরায় টুংটাং চামচের শব্দ আর তোমার চুল কানের পেছনে গুঁজে দেওয়ার কোলাহলে,

নামাজ শেষে আঁতরের গন্ধ আর দুটো সাদা পান্জাবীর হরদম কোলাকুলির কোলাহলে,

অফিস পাড়ায় টিফিন চলাকালীন বিশ টাকার প্যাটিসে দু-চার কামড় বসানোর কোলাহলে,

কিংবা ক্রিকেট মাঠে, পথে-ঘাটে, গার্মেন্টসে, বস্তিতে অথবা রাজনৈতিক লেকচারের কোলাহলে;

আজকাল শব্দ দূষণ হচ্ছে ভীষণ,

তবে খুব ধীরে, আস্তে, নিস্তব্ধতায়।

আমাদের আবার দেখা হবে (We Will Meet Again)

আমাদের আবার দেখা হবে (We Will Meet Again)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

সহস্র বছর মানে ঠিক কতদিন?

অংকে আমি বরাবরই কাঁচা তবে,

মনের হিসেবে একদম ঝানু,

হোক শত সহস্র বা ততধিক, আমাদের আবার দেখা হবে

সুস্থ শহরের অসুস্থ মনা মানুষগুলোর ভীড়ে,

আমাদের আবার দেখা হবে।

যখন সমুদ্রের পাশে কেজি দরে বিক্রি হবে গোলাপী ডলফিনের মাংস,

আমাদের সেদিন আবার দেখা হবে।

আমরা ভুলে যাবো আজকের এই মহামারির কথা,

ভুলে যাবো বিশ্বে আকাল পরেছে মাস্ক, পিপিই কিংবা সাধারণ মনুষ্য জ্ঞানের

ভুলে যাবো অভাব পরেনি সেদিন একনিষ্ঠ ভালোবাসার,

দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?

আমাদের ভালোবাসা তো তবে বেড়েছে সরকারি ব্যাংকের সুদের হারে,

আবার যখন অর্থনৈতিক মন্দার চাপে জর্জরিত থাকবে ভাইরাসের কোলে মাথা দিয়ে ঘুমানো এই বিশ্ব,

আমাদের আবার দেখা হবে।

কেমন শহর, এমন শহর

কেমন শহর, এমন শহর

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

আমার থেকে কয়েক শত ক্রোশ দূরে বসে থাকা এক বন্ধু আমায় চকচকে দুই চোখ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, “আচ্ছা ঢাকা কেমন শহর বলতো?”

আমি সাদামাটা গলায়, শহরের দূষিত সাদা আকাশের মতো চেহারা করে বলেছিলাম,
“ঢাকা বিষন্নতার শহর। দুরহ চিন্তার বীজ বুকে বয়ে বেড়ানো মানুষগুলোর বিষন্নতার।”

“রান্নাঘরে এক টুকরো পনির ইঁদুর ছানাকে কুড়েকুড়ে খেতে দেখেছিস? আমি দেখেছি এই শহরে আপদ্গ্রস্ততা কেড়েকুড়ে খাচ্ছে আমার বাড়ন্ত মস্তিষ্কের এনজাইম।

রাজপথের দিকহীন রাস্তায় সজোরে কষে দেয়া ব্রেকগুলোকে খাবলা মেরে তুলে নিতে দেখেছি আমার সহযাত্রীর ক্লান্ত চোখ।

রাস্তায় পার হতে গিয়ে দেখেছি লাল রক্তে ভিজে পরে থাকা আমার সদ্য চাকরীতে ঢোকা বন্ধুর কালো চামড়ার মানিব্যাগ।

ওদের জাদুর শহর আমার কাছে এক সন্ধ্যে জ্যামের আকুলতার।

ঢাকার ক্যাম্পাসে হাতেহাত গুঁজে রিক্সায় চড়তে গেলেই আমার অশান্তি লাগে খুব। কতই না সম্পর্ক এমনই করে স্বপ্ন বুনেছিলো এই কৃষ্ণচূড়ার পাঁপড়ি পেতে থাকা রাস্তায় হাঁটতে-হাঁটতে,

কতনা বিত্তেরা চোখের পলকে সর্বস্ব হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছে ততধিকবার পুড়ে যাওয়া কমলাপুরের করুণ বস্তিতে, এই শহরেই

কতনা মেধাবী ব্যাংকে ঢুকেছে, টিউশন করিয়ে, কলেজ ছাড়িয়ে ধূল ঝেড়েছে চেপা রাস্তার চল্লিশ বাই ষাট আংটির দোকানের, টাকার খোঁজে, এই শহরে।

আমার কাছে স্বপ্নের ঢাকা, স্বপ্নের মতোই, ভঙ্গুর খুব।

তাছাড়া, এমন শহরতো আমারো নয়। কোথায় আমার ভাষার মানুষ, সবুজ চাদর এই শহরে?

আমার বাবা ঘরে আসতেন ঠান্ডা রাতে,
গায়ের চাদর গালের উপর তুলে দিতেন নির্ভুলভাবে,
খাওয়ার পরে ভেজা হাতেই ভাবতে থাকি, কোথায় আমার মায়ের আঁচল এই শহরে?

কোথায় আমার শূণ্যদিকে হারিয়ে যাওয়া?
আমার দেশে অচেনা সব মানুষগুলো কতদিনের চেনা লাগে, কোথায় তারা?
আমার কাছে বর্ষাকালে বৃষ্টির রঙ ধূসর দেখায় এই শহরে।

আমার কাছে তোমার ঢাকা বড্ড বেশি করুণ লাগে।

 

না চাওয়া সব চাওয়াগুলো (All The Unwanted Needs)

না চাওয়া সব চাওয়াগুলো (All The Unwanted Needs)

Rajiul Huda Dipto is a professional screenplay writer and working for years in the Bangladeshi TV industry. Besides that, he introduces himself as a photographer, whose photographs have been featured in various magazines and exhibitions all around the world. Not regularly, but he publishes his works in national dailies as well. Currently, he is working as a community writer in BuzzFeed and a contributor in Getty Images.

একজন মানুষ তার জীবদ্দশায় কতকি না হতে চেয়েছে,

ছোটবেলায় পুতুল খেলা পাশের বাড়ির পিয়ু, কদম ফুলের মালা হতে চায়তো, আমি হতে চাইতাম তার গাঁথুনি,

শক্ত করে দু’হাত ধরে আমরা কতো ইচিং-বিচিং খেলেছি।

স্কুলে আমার ঠিক পাশেই জায়গা রাখতো নন্দী, একদিন শুনলাম সে নাকি ফিটকিরি হতে চায়,

ফিটকিরির যে বিশ্রী গন্ধ, সে বলেছিলো তার গা থেকে বেরিয়ে আসা ধূপের গন্ধের মতোই,

এই গন্ধের কারণে নাকি ক্লাসে কেউ খুব একটা মিশতে চায়না, ফিটকিরি হলে পানিতে সহজে মেশার মতো সেও সবার সাথে সহজে মিশে যেতে পারবে।

একদিন দুপুরে হুট করে দেখি, আমার প্লাস্টিক ব্যাট আর বলটা পাঁচ টাকার সনপাপরি হয়ে যেতে চায়ছে, শখের পেনসিল বক্সটা রাগ করে স্টোর রুমে চলে যেতে চায়ছে, সন্ধ্যেবেলায় কারেন্ট গেলে কেউ আর বাড়ির দরজা খুলছে না, রাতের দিকে রাগ ধরলে আমার আর কান্না পাচ্ছে না, স্বপ্নগুলো কুৎসিত হয়ে যেতে চায়ছে, শরীরটা বড় হতে চায়ছে।

তারপর থেকেই আমি আর সকালে উঠতে চাইনি, ঘামতে ঘামতে হাঁটতে হাঁটতে গলির মোড়ে পড়তে যেতে চাইনি,

তারপর থেকে কলেজ পাড়ায় দু’টি বছর এক পলকেই শেষ করে ফেলতে চাইনি।

আমি চাইনি আমার মতোই মফস্বলটাও বদলে যাক, ভেজা মাটির গন্ধ ফুরাক, কৃষ্ণচূড়ার গাছ কেটে যাক, হঠাৎ করেই শহর ছেড়ে মহানগরে ঢুকে পরতে আমি চাইনি।

আমি অপুর সংসারের এক দিকে সিঁথি করা, ট্রেন দেখলেই কান চেপে ধরা বিরক্ত অপু হতে চাইনি কখনো,

আমার জীবনের অপর্নাকে কখনো বলতে চাইনি, “তোমার অনুশোচনা হয় না?”

এক মুহূর্তের হাজার রকম অর্থ-মানে খুঁজতে চাইনি, অংকে কাঁচা ভালোই ছিলাম, অল্প-বেশী গোটা-খুচড়ো টাকার গণিত বুঝতে চাইনি।

আজ সকালে কাল সকালের ক্যালেন্ডারে দাগ পরেছে,

ভুলতে বসুক সবাই আমায়, এমন হঠাৎ মন করছে

কতবার গেছি ভুলতে আমিও, তোমার শহর ভুলতে দেয়নি

“কে আমি?” আর “কিসের জন্যে?” এমন প্রশ্ন শুনতে চাইনি।